বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে, নোয়াখালী জেলার দক্ষিণ অংশ বেয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপের সমষ্টি। বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি এই চারটি প্রধান দ্বীপ ও বেশ কয়েকটি ছোট চর সমন্বয়ে সর্বমোট প্রায় ১৪,০৫০ একর এলাকা নিয়ে গঠিত এই দ্বীপাঞ্চলটি ১৯৫০-এর শুরুর দিকে জেগে ওঠে। প্রথমে স্থানীয় জেলেরা দ্বীপটি আবিষ্কার করে। তারা এর নাম দেয় বালুয়ার চর, যা পরবর্তীতে বল্লার চর-এ রূপান্তরিত হয়। শীতকালে এখানে হাজার হাজার অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে। জেলেদের ধরা নানারকম মাছ শুকানোর জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান হিসেবে ব্যবহƒত হতে থাকে। তাদের অনেকে এখানে অস্থায়ী খড়ের ঘরও নির্মাণ করে।
চরাঞ্চলটি খুব দ্রুতই নতুন ঘাসে ভরে যায়। আশেপাশের লোকালয় থেকে লোকেরা নদী বেয়ে এখানে গরু-মহিষ চরাতে আসা শুরু করে। পরবর্তীতে একসময় জরিপ দল এসে গোটা চরাঞ্চলের মাপ-জোঁক নথিবদ্ধ করে। অনেকের মতে এই দ্বীপাঞ্চলে প্রথম বসতি গড়া জনৈক ওসমানের নামে জরিপকারীরা এর নাম দেয় চর ওসমান।
চর ওসমানে প্রায় নিয়মিতই প্রচুর মানুষ গরু-মহিষ চরানোর জন্য আসা-যাওয়া করলেও ১৯৭০-এর আগে এখানে কোন স্থায়ী বসতি স্থাপিত হয় নি। মাঝেমাঝে মৌসুমি তথা অতি অস্থায়ী কিছু বসতি থাকলেও সমগ্র দ্বীপাঞ্চল বছরের অধিকাংশ সময়ই জনবিরল থাকত। একারণে এটি নিঝুম দ্বীপ নামেও পরিচিত হয়ে ওঠে।
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে নিঝুম দ্বীপ হাতিয়া নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়। এসময় নিকটবর্তী হাতিয়া, শাহবাজপুর, রামগতি প্রভৃতি এলাকা থেকে নদীভাঙনের কারণে গৃহহীন লোকজন নিঝুম দ্বীপে এসে বসবাস শুরু করে।
নিঝুম দ্বীপে ছোট বড় বাজার আছে। বাজারগুলিতে প্রধানত চাল-ডাল ও ঔষধের দোকান, মনোহারী সামগ্রীর দোকান ও কিছু খাবারের দোকান আছে।
নিঝুম দ্বীপে ছোট বড় বাজার আছে। বাজারগুলিতে প্রধানত চাল-ডাল ও ঔষধের দোকান, মনোহারী সামগ্রীর দোকান ও কিছু খাবারের দোকান আছে।
বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগ নিঝুম দ্বীপে উপকূলীয় বনাঞ্চল গড়ে তুলেছে। এখানকার বন এলাকায় চিত্রা হরিণ আছে। গাছগাছালির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গাছ কেওড়া, যা স্থানীয়ভাবে কেরফা নামে পরিচিত। এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এর সম্প্রসারিত মূল ভূমিক্ষয় রোধ করে। এছাড়া এই গাছের কাঠ দিয়ে বাড়িঘরের খুঁটি, নৌকা, চাষাবাদের উপকরণ ইত্যাদি তৈরি হয়, জ্বালানি হিসেবেও এর ব্যবহার হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেছে।
অধিবাসীদের প্রধান পেশা কৃষিকাজ, মাছ ধরা ও পশুপালন। এই দ্বীপে প্রচুর শাকসবজির চাষ হয়। এখানে জীবনযাপন কঠিন ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বীপের অধিবাসীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই বসবাস করে। তারপরও প্রতি বছরই মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক লোক বসবাসের জন্য এখানে আসে।
প্রায় ৯১ বর্গ কিমি আয়তনের নিঝুম দ্বীপে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এই গুচ্ছ গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোটখাটো ঝুপড়ি ঘর। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০ (প্রেক্ষাপট ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ)। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার।
এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে।
এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। এই শুঁটকি মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। আবার এই শুঁটকি হাঁস-মুরগীর খাবারেও ব্যবহার করা হয়। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। ইদানিং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।
যাতায়ত ব্যবস্থাঃ
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। সময়মতো লঞ্চ ছাড়লে এবং আবহাওয়া ঠিক থাকলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরদিন সকালে হাতিয়া লঞ্চঘাটে পৌছবে। এ ছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকেও চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। সময়মতো লঞ্চ ছাড়লে এবং আবহাওয়া ঠিক থাকলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরদিন সকালে হাতিয়া লঞ্চঘাটে পৌছবে। এ ছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকেও চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ করতে হলে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করতে হয় নিঝুম দ্বীপের মানুষদের। হাতিয়া, ভোলা কিংবা ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে হলে তাদেরকে পুরোপুরি জোয়ার ভাটা মেনে চলতে হয়। ঢাকায় যেতে হলে তাদেরকে সকালে (জোয়ার আসার)পর হাতিয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করতে হয়। প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় পর ট্রলার হাতিয়া পৌঁছায়।
ট্রেনে করে যেতে চাইলে প্রথমে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে নোয়াখালী রেলওয়ে ষ্টেশন যেতে হবে। এরপর বাসে নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট হয়ে উপরের রুট অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে যেতে চান তাদের জন্য ঢাকার যাত্রাবাড়ী তথা সায়েদাবাদ থেকে রয়েছে নোয়াখালীর বাস। ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হয় মাইজদী সোনাপুর। সোনাপুর থেকে যেতে হবে চেয়ারম্যান ঘাট। সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাটের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। যানবাহন হিসেবে রয়েছে বাস, টেম্পু ও টু-স্ট্রোক বেবিট্যাক্সি। চেয়ারম্যান ঘাট পৌছে সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার অথবা সী ট্রাকে করে প্রথমে হাতিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যেতে হয় হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে। তারপর নলচিরা ঘাট থেকে যেতে হয় দক্ষিণদিকে জাহাজমারা নামক ঘাটে। সময় লাগে ৩০ মিনিটের মতো। আবার জাহাজমারা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে যেতে হয় নিঝুম দ্বীপে। তবে, দলবেধে গেলে সরাসরি চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ট্রলার রিজার্ভ করে নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়। উল্লেখ্য এই পথে নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার সময় জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
কোথায় থাকবেনঃ
নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য অবকাশ পর্যটন নির্মাণ করেছে নিঝুম রিসোর্ট এবং নামার বাজার মসজিদ কতৃপক্ষ নির্মাণ করেছে মসজিদ বোর্ডিং।
নিঝুম রিসোর্ট। এছাড়া ও অনেক রিসোর্ট রয়েছে।
নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য অবকাশ পর্যটন নির্মাণ করেছে নিঝুম রিসোর্ট এবং নামার বাজার মসজিদ কতৃপক্ষ নির্মাণ করেছে মসজিদ বোর্ডিং।
নিঝুম রিসোর্ট। এছাড়া ও অনেক রিসোর্ট রয়েছে।
No comments:
Post a Comment