মাধবপুর লেক

,
প্রকৃতিই পারে জীবনের রং পাল্টে দিতে,বাংলাদেশের সিলেটের মৌলভিবাজারের মাধবপুর লেক যেন তারই সত্যতা প্রকাশ করছে। চলুন না এই বর্ষায় ঘুড়ে আসি মাধবপুর থেকে। মাধবপুর লেকে যেতে যেতে চোখে পড়বে চোখজুড়ানো চা-বাগান।
সারি সারি চা-গাছ বুকে-পিঠে নিয়ে এদিক-ওদিকে দাঁড়ানো টিলা। সেসব টিলার মাঝেই টলমলে জলের হ্রদ। হ্রদে ভাসছে শাপলা-শালুক। ছায়াবৃক্ষের ডালে বসে ডাকছে পাখিরা। মাধবপুর লেকের এমন সৌন্দর্যে মন হারানোর কেমন একটা ভাব যে-কাউকেই পেয়ে বসবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে মাধবপুর লেকের সাকিন। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে ভানুগাছ-ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়ক দিয়ে মাধবপুর বাজার। বাজার থেকে ডান দিকে ঢুকে গেছে একটি সড়ক।
সড়ক ধরে কিছু দূর এগোতেই দেখা মেলে দলবদ্ধ বা দলছুট লোকজনের আনাগোনা। তাঁরা সবাই পর্যটক। একঘেয়ে জীবনে স্বস্তির খোঁজে তাঁরা এসেছেন সবুজ-শ্যামলে ঘেরা এই হ্রদ দেখতে।
মাধবপুর লেকে পর্যটকের আনাগোনা প্রায় প্রতিদিনেরই ঘটনা। এখানে এসে সবাই সবুজে মিশে যেতে চান। প্রাণভরে নেন শ্বাস। হ্রদের পানিতে আত্মছায়ার মাঝে নিজেকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ মেলে।
লালচে মাটির সড়কের দুপাশে মেহগনি, নিম, অর্জুনসহ নানা জাতের গাছ। গাছে চোখে পড়ে টিয়া পাখি। সবুজের সঙ্গে অপার মেলবন্ধন তাদের। রঙে-ঢঙে মিলেমিশে পালকে হাওয়া মাখছে তারা। অন্য পাখি যে নেই, তা নয়। দেখা মেলে ঘুঘু কিংবা শালিকের। অনেক অচেনা পাখিও এডাল-ওডাল করে বেড়ায়।
এখন বর্ষাকাল। শীত চলে গেছে কবে! নয়তো এই হ্রদে ডুব-সাঁতারে ঘুরে বেড়ানো পরিযায়ী পাখির দেখা মিলত। তবে সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি—এ রকম কিছু পাখি বারো মাসই এই হ্রদের স্থায়ী বাসিন্দা।
হ্রদের দুপাশের টিলাগুলোতে চায়ের গাছ। চা-বাগান যেন হ্রদকে দুই পাঁজর দিয়ে আগলে রেখেছে। এটি মূলত মাধবপুর চা-বাগানেরই অংশ। চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে চিরল পাতার ছায়াবৃক্ষ। হ্রদের কিনার ঘেঁষে চেনা-অচেনা অনেক ঝোপঝাড়। ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে হরেক রকমের মায়া লাগা বুনো ফুল।
হ্রদের পারে পারে চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। হ্রদের পার ঘেঁষে হাঁটার জন্য চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে সরু পথ। টিলার ওপর আছে তাঁবু। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি পেলে এখানে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। শীত মৌসুমে যেকোনো জায়গায় বসা যায়। কিন্তু বর্ষায় হয় তাঁবু, নয়তো সঙ্গের ছাতাটিই ভরসা।
টিলার ওপর থেকে যেদিকেই চোখ যায়, দেখা মেলে বনের নীল রেখা। অনেক দূরে গিয়ে নীল রেখা যেন ছুঁয়েছে আকাশের সীমা!
মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান, আর বুনো নির্জনতার আমেজ মেলে।
ছুটিতে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে অনেকেই মাধবপুর লেকে ছুটে আসেন। তবে এখানে রাত কাটানোর সুযোগ নেই। সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়তে হয়।
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের নূরজাহান চা-বাগানের পথ দিয়েও মাধবপুর লেকে যাওয়া যায়। পথটা পাহাড়ি আর সবুজে মোড়ানো। এই পথে চোখজুড়ানোর নানা রসদ আছে। শান্ত-সবুজ চা-বাগানের দেখা মিলবে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গভীর বনটাও একনজর দেখে নেওয়া যাবে।
ভানুগাছ-ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়কে একটি ঐতিহাসিক স্থান আছে। সড়কের শেষ প্রান্তে ধলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ রয়েছে। স্মৃতিসৌধের স্থানটির দূরত্ব মাধবপুর লেক থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার মতো দক্ষিণে।

মাধবপুর লেকে যেতে হলে ট্রেন বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জে আসতে হবে। তারপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে মাধবপুর লেক। প্রাইভেট কার বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সেখানে যাওয়া যায়। রাতে থাকতে হলে শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে।

No comments:

Post a Comment

Travel

ঘুরে আসুন হামহাম জলপ্রপাত

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভুমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নতুন সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাত একনজর দেখার জন্য দেশের বিভ...