উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে বছরজুড়ে থাকে দেশীয় এবং ভিনদেশি পর্যটকদের আনাগোণা। জেলার বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান ঘুরে পর্যটকদের চোখ আটকে যায় দৃষ্টি নন্দন পাথরের জাদুঘরে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের একমাত্র এ পাথরের জাদুঘর। এখানে রয়েছে নতুন এবং পুরনো পাথরের রকমারি সমাহার। তবে নামকরণ এবং পরিচয়ে পাথরের এ জাদুঘর ‘রকস্ মিউজিয়াম’ নামেই পরিচিত।
পাথরের গায়ে লেখা ইতিহাস থেকে পরিচিত হচ্ছেন ঐতিহ্যের সঙ্গে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের একটি কক্ষে ১৯৯৭ সালে রকস্ মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. নাজমুল হক। এ মিউজিয়ামে রয়েছে হাজার বছরের নানান আকৃতির পাথরসহ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
প্রত্যেকটি পাথরের পাশে লেখা রয়েছে কোথা থেকে এবং কারা সংগ্রহ করেছেন এ মূল্যবান প্রত্নসম্পদ। এখানে রয়েছে আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, নুড়ি পাথর, সিলিকা নুড়ি ও সিলিকা বালি, হলুদ ও গাঢ়
হলুদ বালি, কাঁচবালি, খনিজবালি, লাইমস্টোন, পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শিলাসহ আরও অনেক প্রত্নসম্পদ।
হলুদ বালি, কাঁচবালি, খনিজবালি, লাইমস্টোন, পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শিলাসহ আরও অনেক প্রত্নসম্পদ।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের মূলফটক পার হলে ডান পাশে দেখা যায় ছোটবড় পাথরে সাজানো মাঠের একাংশ। পাথরের এ জাদুঘরের সামনে গোল চক্করের অবয়বে বেশ কয়েকটি বড় আকারের পাথর বসানো রয়েছে। এসব পাথরের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর। এর বর্ণনা রয়েছে পাশের ছোট্ট নাম ফলকে।
দুই প্রকার গ্যালারি নিয়েই এ পাথরের জাদুঘর। ঘরের ভেতরের গ্যালারিতে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, তরঙ্গায়িত চ্যাপ্টা পাথর, লাইমস্টোন এবং কঠিন শিলা। রয়েছে আদিবাসীদের ব্যবহৃত পণ্য সামগ্রী, নদীর নিচে ও ভূগর্ভে পাওয়া অশ্মীভূত কাঠ, প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো ইমারতের ইট-পাথরের মূর্তি। রয়েছে পোড়ামাটির নকশা। পাথরের এ জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ আস্ত শাল গাছের বিশাল আকৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী ডিঙ্গি নৌকা। প্রায় হাজার বছরের পুরোনো ২৫ ফুট দৈর্ঘ ডিঙ্গি নৌকাটি ১০৯৯ সালে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চাওয়াই নদীর মাহানতের ঘাটের ৮ ফুট নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়।
এটি একটি আস্ত শালগাছ খোদাই করে নির্মাণ করা হয়। প্রাচীনকালে আদিবাসীরা এই নৌকাটি ব্যবহার করতেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আর বাইরের গ্যালারিতে রয়েছে বড় আকারের বেলে পাথর, গ্রানাইট পাথর, কোয়ার্জাহিট, ব্যাসল্ট, শেল, সিলিকায়িত কাঠ বা গাছ থেকে রুপান্তরিত পাথর। এসব পাথরের কোনোটি গোলাকার, আবার কোনো কোনোটি চেপ্টা অথবা লম্বাকার। পাথরের গায়ে আঁকা রয়েছে নানা রকমের সাংকেতিক চিহ্ন।
জাদুঘরের বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আদিযুগে ব্যবহৃত দা, কাচি, কদালসহ ঐতিহাসিক নানান নিদর্শন।
দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা পঞ্চগড়ে ছুটে যান উত্তরের শেষ সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা। বাংলাবান্ধার জিরোপয়েন্ট, স্থলবন্দর, তেঁতুলিয়ার চা বাগান ঘুড়ে তারা দেখতে আসেন দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর ‘পঞ্চগড় রকস্ মিউজিয়াম’। খুটে খুটে তারা পাথর দেখেন
বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর বা রকস
কিভাবে যাবেন
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড় যাবার জন্য বিভিন্ন ডে-নাইট বাস সার্ভিস চালু আছে। নন-এসি হানিফ অথবা নাবিল পরিবহনণের বাসে সরাসরি পঞ্চগড়।এছাড়া আরও বাস রয়েছে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সরাসরি পঞ্চগড় যাবার সুযোগ নেই, এক্ষেত্রে সন্ধ্যায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিয়ে দিনাজপুর বা পার্বতীপুর যেতে হবে। দিনাজপুর যেতে প্রায় ভোর ৬ টা বাজবে, এরপর ৩ ঘন্টার বাস জার্নিতে চলে যান পঞ্চগড়। এছাড়া দিনাজপুর কিংবা পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশান থেকে লোকাল ট্রেন ও ডেমু ট্রেন পঞ্চগড় যায়। সময় মিলে গেলে সে সব ট্রেনে চলে যেতে পারেন পঞ্চগড়।
কোথায় থাকবেন
রাত্রি যাপনের জন্য পঞ্চগড়ে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল পাবেন।
কোথায় খাবেন
যদি ট্রেনে যাত্রা করেন তবে দিনাজপুরে রুস্তম কিংবা ফাইভ স্টার হোটেলের গরুর ভুনা মাংস মিস করা ঠিক হবে না। এছাড়া দিলশাদ হোটেল আর রোলেক্স ফুডের খাবার চেখে দেখতে পারেন। পঞ্চগড় শহরে খাবার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল পাবেন তবে মৌচাক হোটেলের খাবার খেয়ে দেখতে পারেন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
No comments:
Post a Comment