তিস্তা ব্যারেজ ও সেচ প্রকল্প



বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারেজ
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলাধীন গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী এবং পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলাধীন খালিসা চাপানী ইউনিয়নের ডালিয়া- এর মধ্যবর্তী স্থানে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত। ডালিয়া নামটি ফুলের মতো হলেও এটি একটি গ্রাম, যা দেখতে কোনো মনোহরিণীর মতো।

সবুজে আচ্ছাদিত এ গ্রামটি আকর্ষণ করে সবচেয়ে পথচারীদের। ভারতের উত্তর সিকিমের পার্বত্য এলাকায় তিস্তার উৎপত্তি। বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নীলফামারী জেলা দিয়ে। এ নদী বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের সব কয়টি জেলা অর্থাৎ নীলফামারী,লালমনিরহাট , রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবহমান। আশির দশকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা নদীর ওপর গড়ে তোলা হয় বাঁধ। যাকে বলা হয় তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প।
প্রকল্পটি নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে। এর কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে এবং শেষ হয় ১৯৯০ সালে। সেচ প্রকল্পটির পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
নদীর মাঝখানে ব্যারাজ। যান্ত্রিক গেট। টানা ৪৪টি গেট একনাগাড়ে। এর আরেক পাশে আছে আরও আটটি গেট। খালে পানি নেওয়ার জন্য। অনেকগুলোই খোলা। তিস্তা নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে, পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় সেচের কাজে লাগানো হয় এই ব্যারাজ দিয়ে। লোহা-লক্কড়, কংক্রিটের বিশাল বিশাল সব কাঠামো। নদীর দুপাশে গড়ে তোলা হয়েছে সবুজ বেষ্টনী।

উত্তরাঞ্চল খরাপিড়িত এলাকা হওয়ায় তৎকালিন বৃটিশ আমলে ১৯৩৭ সালে তিস্তা ব্যারেজ নিমার্ণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।।তবে এর মুল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান আমলে। ১৯৫৭ সালে নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা থাকলে রাজনৈতিক অস্থিতিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে ব্যারেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫ সালে সৌদি উন্নয়ন তহবিল ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ২,৫০০কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারেজসহ সেচ যোগ্য কৃষিজমি ও জলকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং একই বছর ৫ আগস্ট এর কার্যক্রম চালু হয়। এর মোট নির্মাণ ব্যয়ছিল ১৫শ কোটি টাকা এবং ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে।২০১৬ সালে ২৬৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

তিস্তা ব্যারেজ ও সেচ প্রকল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে বিনোদন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তিস্তার ব্যারেজের উজানে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, সেচ বাইপাস খাল, বনায়ন আর পাথর দিয়ে বাধাঁনো পাড় সব মিলে এক মনোরম পরিবেশ। শীতকালে এখানে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
কিভাবে যাবেনঃ
রংপুর শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরের এই প্রকল্পে যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। নীলফামারীর ডালিয়ার গাড়িতে চড়ে যাওয়া যায়।
লালমনিরহাট সদর হতে অথবা হাতীবান্ধা উপজেলা সদর হতে সড়কপথে তিস্তা ব্যারেজ এ যাওয়া যায়। হাতীবান্ধা উপজেলা সদর হতে সড়কপথে এর দুরত্ব ২০ কিমি।
যারা ঢাকা কিংবা অন্য শহর থেকে যাবেন তারা সরাসরি যেতে পারেন নীলফামারী। সেখানে স্কুটার, রিক্সা কিংবা মোটরসাইকেলে করে যেতে পারেন তিস্তাপারে।

করমজল



মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে সামান্য দূরে পশুর নদীর তীরে ৩০ হেক্টর জমির ওপর বন বিভাগের আকর্ষণীয় এক পর্যটনস্থল করমজল যা সুন্দরবনে অবস্থিত। করমজলকে বন বিভাগ সুন্দরবনের মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছে। একদিনে সুন্দরবন ভ্রমণ এবং সুন্দরবন  সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান করমজল । 
এখানকার প্রধান প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে হরিণ, কুমির, বানর, কাঠের ট্রেইল, টাওয়ার, নৌকা চালনা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। দেশে প্রাকৃতিকভাবে কুমির প্রজননের একমাত্র কেন্দ্র এখানে অবস্থিত।

নদী পথে খুলনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং মংলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান। একটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র ছাড়াও এখানে আছে হরিণ ও কুমির প্রজনন ও লালন পালন কেন্দ্র। মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়লে করমজলের জেটিতে পৌঁছা যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। পর্যটন কেন্দ্রটির শুরুতেই বিশাল আকৃতির মানচিত্র সুন্দরবন সম্পর্কে সাম্যক ধারণা দেবে।
 মানচিত্র পেছনে ফেলে বনের মধ্যে দক্ষিণে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। পথের নাম মাঙ্কি ট্রেইল। এই নামের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় ট্রেইলে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই। পুরো ট্রেইল জুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের।
পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এ বনে বাইন গাছের সংখ্যা বেশি। কাঠের পথ কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের বাঁয়ে শাখা পথ গিয়ে থেমেছে পশুরের তীরে। শেষ মাথায় নদীর তীরে বেঞ্চ পাতানো ছাউনি। মূল পথটি আরও প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণে গিয়ে ছোট খালের পাড়ে থেমেছে। 

পথের মাথায় এখানেও আরও একটি শেইড। সেখান থেকে আবারও পশ্চিম দিকে কাঠের ট্রেইলটি চলে গেছে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পাশে। এই ট্রেইলের মাঝামাঝি জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ। এর চূড়ায় উঠলে করমজলের চারপাশটা ভালো করে দেখা যায়।

কাঠের তৈরি ট্রেইলের একেবারে শেষ প্রান্তে কুমির প্রজনন কেন্দ্র। সেখান থেকে সামান্য পশ্চিম দিকে হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। সামনেই ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। কোনটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনটিতে আরও একটু বড় বয়সের লোনা জলের কুমিরের বাচ্চা। একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়াল ঘেরা বড় পুকুরে আছে রোমিও, জুলিয়েট আর পিলপিল। 

জেলেদের জালে ধরা পড়া এই তিন লোনা পানির কুমিরকে ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজলে আনা হয়। এই জুটি প্রজননক্ষম হয় ২০০৫ সালে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপায়ে কুমির উৎপাদনে মূল অবদান তাদেরই। জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। লোনা পানির এই প্রজাতির কুমির আশি থেকে একশো বছর বাঁচে। জুলিয়েট এ পর্যন্ত ডিম দিয়েছে মোট ৪৮২টি। সেখান থেকে ২৮৪টি বাচ্চা ফুটিয়েছেন বন্য প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের কর্মীরা। করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের আরেক নারী সদস্য পিলপিল। এখন পর্যন্ত সে ডিম দিয়েছে ৪৪টি, যা থেকে বাচ্চা ফুটেছে ৩৩টি।
এর পাশেই চোখে পড়বে চিড়িয়াখানার মতো খাচায় ঘেরা খোলা জায়গা। ভেতরে চিত্রা হরিণ। খাঁচার ভেতরে পশ্চিম কোণে ছোট আরেকটি খাঁচা। ভেতরে রয়েছে কয়েকটি রেসাস বানর।
টিকেট মূল্যঃ
করমজলে দেশি পর্যটকের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা, বিদেশী পর্যটক ৩শ’ টাকা। দেশি ছাত্র ২০ টাকা। দেশি গবেষক ৪০ টাকা। বিদেশী গবেষক জনপ্রতি ৫শ’ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক (বারো বছরের নিচে) দশ টাকা। দেশি পর্যটকের ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহারে ক্যামেরা প্রতি ২শ’ টাকা। বিদেশি পর্যটক ৩শ’ টাকা।
উপরের সব মূল্যের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য।
কীভাবে যাবেনঃ
রাজধানী ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা, বাগেরহাটগামী বাস কিংবা কমলাপুর ট্রেনে করে খুলনা আসতে হবে প্রথমে। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বাগেরহাটে পৌছাতে পারবেন। ঢাকা থেকে বাগেরহাটে চলাচলকারী বাসগুলো যা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকার গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে।
খুলনা থেকে রুপসা বা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে লঞ্চ পাবেন। এছাড়া বাগেরহাটের মংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকে পাবেন সুন্দরবনে যাওয়ার নৌযান পাওয়া যায়।করমজল যেতে হয় পশুর নদী পাড়ি দিয়ে। এই নদী সবসময়ই কম-বেশি উত্তাল থাকে। তাই ভালো মানের ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে যাওয়া উচিৎ। আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট আছে কিনা।
বিঃদ্রঃ বন রক্ষী ছাড়া জঙ্গলের ভেতরে ঢুকবেন না। হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের কোন প্রাণীকে খাবার দিবেন না

নিঝুম দ্বীপ (চর ওসমান)



বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে, নোয়াখালী জেলার দক্ষিণ অংশ বেয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপের সমষ্টি। বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি এই চারটি প্রধান দ্বীপ ও বেশ কয়েকটি ছোট চর সমন্বয়ে সর্বমোট প্রায় ১৪,০৫০ একর এলাকা নিয়ে গঠিত এই দ্বীপাঞ্চলটি ১৯৫০-এর শুরুর দিকে জেগে ওঠে। প্রথমে স্থানীয় জেলেরা দ্বীপটি আবিষ্কার করে। তারা এর নাম দেয় বালুয়ার চর, যা পরবর্তীতে বল্লার চর-এ রূপান্তরিত হয়। শীতকালে এখানে হাজার হাজার অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে। জেলেদের ধরা নানারকম মাছ শুকানোর জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান হিসেবে ব্যবহƒত হতে থাকে। তাদের অনেকে এখানে অস্থায়ী খড়ের ঘরও নির্মাণ করে।

চরাঞ্চলটি খুব দ্রুতই নতুন ঘাসে ভরে যায়। আশেপাশের লোকালয় থেকে লোকেরা নদী বেয়ে এখানে গরু-মহিষ চরাতে আসা শুরু করে। পরবর্তীতে একসময় জরিপ দল এসে গোটা চরাঞ্চলের মাপ-জোঁক নথিবদ্ধ করে। অনেকের মতে এই দ্বীপাঞ্চলে প্রথম বসতি গড়া জনৈক ওসমানের নামে জরিপকারীরা এর নাম দেয় চর ওসমান।
চর ওসমানে প্রায় নিয়মিতই প্রচুর মানুষ গরু-মহিষ চরানোর জন্য আসা-যাওয়া করলেও ১৯৭০-এর আগে এখানে কোন স্থায়ী বসতি স্থাপিত হয় নি। মাঝেমাঝে মৌসুমি তথা অতি অস্থায়ী কিছু বসতি থাকলেও সমগ্র দ্বীপাঞ্চল বছরের অধিকাংশ সময়ই জনবিরল থাকত। একারণে এটি নিঝুম দ্বীপ নামেও পরিচিত হয়ে ওঠে। 
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে নিঝুম দ্বীপ হাতিয়া নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়। এসময় নিকটবর্তী হাতিয়া, শাহবাজপুর, রামগতি প্রভৃতি এলাকা থেকে নদীভাঙনের কারণে গৃহহীন লোকজন নিঝুম দ্বীপে এসে বসবাস শুরু করে।
নিঝুম দ্বীপে ছোট বড় বাজার আছে। বাজারগুলিতে প্রধানত চাল-ডাল ও ঔষধের দোকান, মনোহারী সামগ্রীর দোকান ও কিছু খাবারের দোকান আছে। 
বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগ নিঝুম দ্বীপে উপকূলীয় বনাঞ্চল গড়ে তুলেছে। এখানকার বন এলাকায় চিত্রা হরিণ আছে। গাছগাছালির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গাছ কেওড়া, যা স্থানীয়ভাবে কেরফা নামে পরিচিত। এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এর সম্প্রসারিত মূল ভূমিক্ষয় রোধ করে। এছাড়া এই গাছের কাঠ দিয়ে বাড়িঘরের খুঁটি, নৌকা, চাষাবাদের উপকরণ ইত্যাদি তৈরি হয়, জ্বালানি হিসেবেও এর ব্যবহার হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেছে।

অধিবাসীদের প্রধান পেশা কৃষিকাজ, মাছ ধরা ও পশুপালন। এই দ্বীপে প্রচুর শাকসবজির চাষ হয়। এখানে জীবনযাপন কঠিন ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বীপের অধিবাসীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই বসবাস করে। তারপরও প্রতি বছরই মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক লোক বসবাসের জন্য এখানে আসে।
প্রায় ৯১ বর্গ কিমি আয়তনের নিঝুম দ্বীপে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এই গুচ্ছ গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোটখাটো ঝুপড়ি ঘর। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। 

নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০ (প্রেক্ষাপট ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ)। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। 
এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে। 
এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। এই শুঁটকি মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। আবার এই শুঁটকি হাঁস-মুরগীর খাবারেও ব্যবহার করা হয়। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। ইদানিং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।

যাতায়ত ব্যবস্থাঃ
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। সময়মতো লঞ্চ ছাড়লে এবং আবহাওয়া ঠিক থাকলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরদিন সকালে হাতিয়া লঞ্চঘাটে পৌছবে। এ ছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকেও চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ করতে হলে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করতে হয় নিঝুম দ্বীপের মানুষদের। হাতিয়া, ভোলা কিংবা ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে হলে তাদেরকে পুরোপুরি জোয়ার ভাটা মেনে চলতে হয়। ঢাকায় যেতে হলে তাদেরকে সকালে (জোয়ার আসার)পর হাতিয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করতে হয়। প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় পর ট্রলার হাতিয়া পৌঁছায়।
ট্রেনে করে যেতে চাইলে প্রথমে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে নোয়াখালী রেলওয়ে ষ্টেশন যেতে হবে। এরপর বাসে নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট হয়ে উপরের রুট অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে যেতে চান তাদের জন্য ঢাকার যাত্রাবাড়ী তথা সায়েদাবাদ থেকে রয়েছে নোয়াখালীর বাস। ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হয় মাইজদী সোনাপুর। সোনাপুর থেকে যেতে হবে চেয়ারম্যান ঘাট। সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাটের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। যানবাহন হিসেবে রয়েছে বাস, টেম্পু ও টু-স্ট্রোক বেবিট্যাক্সি। চেয়ারম্যান ঘাট পৌছে সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার অথবা সী ট্রাকে করে প্রথমে হাতিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যেতে হয় হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে। তারপর নলচিরা ঘাট থেকে যেতে হয় দক্ষিণদিকে জাহাজমারা নামক ঘাটে। সময় লাগে ৩০ মিনিটের মতো। আবার জাহাজমারা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে যেতে হয় নিঝুম দ্বীপে। তবে, দলবেধে গেলে সরাসরি চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ট্রলার রিজার্ভ করে নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়। উল্লেখ্য এই পথে নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার সময় জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
কোথায় থাকবেনঃ
নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য অবকাশ পর্যটন নির্মাণ করেছে নিঝুম রিসোর্ট এবং নামার বাজার মসজিদ কতৃপক্ষ নির্মাণ করেছে মসজিদ বোর্ডিং।
নিঝুম রিসোর্ট। এছাড়া ও অনেক রিসোর্ট রয়েছে।

মাধবকুন্ড ঝর্ণা


মাধবকুন্ড ঝর্ণা যা বাংলাদেশের সুউচ্চ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা নামক উপজেলায় এই সুন্দর নয়নাভিরাম জলপ্রপাতটির অবস্থান। একসময় পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মানেই ছিলো মাধবকুন্ড। এখন দেশের ভেতরে আরো অনেক ঝর্ণার সন্ধান মিলেছে। তবে এখনো জলপ্রপাত অনুরাগী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন মাধবকুন্ড ঝর্ণা।
 পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত এই স্থানটিতে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে পুরো এলাকাটিকে ঘিরে তৈরি করা হচ্ছে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক।

যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের যা পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বনাম: আদম আইল পাহাড়) নামে পরিচিত। এর বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে ছড়া। এই পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়েছে মাধবছড়া। অর্থাৎ গঙ্গামারা ছড়া হয়ে বয়ে আসা জলধারা [১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাবমতে] প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে মাধবছড়া হয়ে প্রবহমান। সাধারণত একটি মূল ধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে, বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে।

জলের এই বিপুল ধারা পড়তে পড়তে নিচে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুণ্ডের। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে। মাধবকুন্ড ঝর্ণা থেকে ১৫-২০ মিনিটের হাটা দুরত্বে রয়েছে আরেকটি ঝর্ণা যা পরিকুন্ড ঝর্না নামে পরিচিত।
মাধবকুন্ড ঝর্ণাতে আসার পথে চোখে পড়বে উঁচু নিচু পাহাড়ি টিলায় দিগন্তজোড়া চা বাগান। টিলার ভাঁজে ভাঁজে খাসিয়াদের পানপুঞ্জি ও জুম চাষ। মাধবকুন্ড ঝর্ণার (Madhobkundo Waterfall) পাশেই রয়েছে কমলা বাগান, চা, লেবু, সুপারি ও পানের বাগান। ফলে মাধবকুন্ড বেড়াতে গেলে সহজেই ঘুরে আসা যায় এসব বাগানে।
মাধবকুন্ড যাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় ঝর্ণা পানিতে পূর্ণ থাকে।

বাইক্কা বিল





মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এ বাইক্কা বিল। ঢাকা থেকে ২০০ কিমি. উত্তর-পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত শহর শ্রীমঙ্গল। এ শহরের ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাইল হাওর। এর পূর্বদিকে ১০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ অভয়াশ্রমটি। 

মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের সাহায্য এবং স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এ অভয়াশ্রমই ঐতিহাসিকভাবে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তারে প্রথম এলাকা। রাজিব পালের বর্ননায় শোনা যাক বাইক্কা বিলের বিস্তারিত

শহর ছাড়িয়ে গাড়ি নামল কাঁচা রাস্তায়। এবড়োথেবড়ো পথে গাড়ি চলছিল হেলেদুলে। পেছনের ছিটে বসে প্রায়ই লাফিয়ে উঠছিলাম। কিন্তু নির্জন পথের সৌন্দর্যও কম ছিল না। পড়ন্ত বিকালে জেলেরা ফিরছিল মাছ নিয়ে। কী মাছ ধরেছেন জানতে চাইলে এক জেলে খলুইয়ের ঢাকনা সরিয়ে দেখাল চিতল, টাকি আর তেলাপিয়া মাছ।

 দিন শেষে কিছু রোজগারের প্রত্যাশায় তার ঠোঁটের এক চিলতে হাসি বিকালের কমলা রঙের রোদের মতোই সুন্দর লাগছিল। হাওরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল সবুজ কচুরিপানার ভেতরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বেগুনিরঙা ফুলদের। হাওর হচ্ছে এমন একটি এলাকা যা দুটি নদী প্রবাহ এলাকার মাঝের নিচু প্লাবন ভূমি। এ অঞ্চল বর্ষায় সম্পূর্ণ প্লাবিত হলেও শীতে আবার শুকিয়ে যায়। গাড়ি থেকে নামতে হল বেশ খানিকটা দূরেই। যান্ত্রিক শব্দ যাতে নির্জনতা ভঙ্গ না করে সে জন্যই এ ব্যবস্থা। হাওরের ভেজা জলাভূমিতে পা রাখতেই দৃষ্টি কেড়ে নিল বাহারি পদ্ম ও শাপলা ফুল। হঠাৎই ডানা ঝাঁপটিয়ে আকাশে উড়াল দিল এক ঝাঁক পাখি। দূরে গোল পদ্মপাতা আর গোলাপি পদ্ম ও সাদা শাপলার ভিড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি যেন হাতছানি দিয়ে ডাক দিল। নাহ্! এ সৌন্দর্য কি দূর থেকে দেখা যায়! আমরা ডিঙি নৌকায় উঠলাম মাছ, পাখিদের কাছে যাব বলে। নৌকায় ভেসে যেতে যেতে আমরা দেখলাম ঝাঁকে ঝাঁকে ল্যাঞ্জা হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ভুতিহাঁস, পাতি সরালি, দাপটে সাঁতার কাটছে রাজ সরালি। এছাড়াও আছে পানকৌরি, কানি বক, সাদা বক, নীল সুন্দর কালিম, টিটি ও ঈগল। আছে শামুকভাঙা পাখির দল। 

তবে মুশকিল হচ্ছে কাছে গেলেই পাখিগুলো উড়ে পালায়। ফিরতে ফিরতে দেখছিলাম মাছ নির্ভয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তারের জন্য নানারকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মা মাছ যাতে নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে সে জন্য পানির ভেতর সিমেন্টের মোটা পাইপ বসানো আছে। বিলের ভেতর কত রকম যে জলজ উদ্ভিদ। নানারকম পাখির বিষ্টার কারণে এগুলো দ্রুত বাড়তে থাকে। আর সেগুলোই খেয়ে বাড়তে থাকে তৃনভোজি পাখি ও মাছ।

নৌকা পাড়ে ভিড়তেই চোখে পড়ল কাদা-মাটিতে বেড়ে ওঠা ঘাস-জঙ্গলের ভেতর সোনার নাকফুলের মতো উঁকি দিয়েছে ছোট্ট গোল গোল হলুদ ফুল। বিলের পাড়েই নির্মাণ করা হয়েছে একটি উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। দর্শনার্থীরা সেখানে উঠে পাখি দেখে থাকে। বিলের রক্ষণাবেক্ষণকারী মিন্নত আলী আমাদের নিয়ে উঠলেন টাওয়ারে। ওপরে দুটি দূরবীন আছে। যার একটা এরই মধ্যে বিকল হয়ে আছে। টাওয়ারের ওপরের উঠে বিলটাকে আরও সুন্দরভাবে দেখা গেল। 

উঁচু থেকে হাওর অঞ্চলের অনেকটাই দেখা যায়। মিন্নত আলীর কাছে জানা গেল, মানুষের কোলাহলে এবং নানারকম কর্মকাণ্ডে কমে গিয়েছিল হাওরের অতিথি পাখি। কিন্তু অভয়াশ্রম করার পর সেইসব পাখি আবার ফিরতে শুরু করেছে। বিলের পাশের হিজল-করোচের বনে বাসা বেঁধে বাচ্চা দিতে শুরু করেছে মুখচেনা পাখিরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত হয়ে উঠল পুরো এলাকা। কাগজে এর আগে বহুবার ছবি দেখেছি বাইক্কা বিলের পাখিদের। বর্ণনাও পড়েছি। অথচ নিজে চোখে দেখার অনুভূতি যেন একেবারেই অন্যরকম। একবার গেলে বুঝবেন, প্রকৃতি আমাদের কতটা উজ্জ্বীবিত করে। কর্মব্যস্ততার অবসরে একটা দিন না হয় কাটিয়ে গেলেন মাছের সঙ্গে, পাখিদের সঙ্গে। পাখির গান শুনতে শুনতে বন্য ফুলের গন্ধে মেতে উঠতে উঠতে মনে হবে জীবনটা এত সুন্দর!

শাহ সুজার তোহাখানা (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)


শাহ সুজার তোহাখানা একটি তিনতলা বিশিষ্ট রাজ প্রাসাদ। তোহাখানা ফার্সি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। গৌড়-লখনৌতির ফিরোজপুর এলাকায় একটি বড় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ভবন কাঠামোটি ঐতিহ্যগতভাবে তোহাখানা নামে পরিচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি. দূরেুত্বে অবস্থিত শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী তোহাখানা কমপ্লেক্স বা তোহাখানা অবস্থিত।
বঙ্গ সুলতান শাহ সুজা তাঁর মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বাসের জন্য ফিরোজপুরে তাপনিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। সময়ে সময়ে শাহ সুজাও এখানে এসে বাস করতেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পু্ত্র শাহ্ সূজা বাংলার সুবাদার থাকাকলে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিঃ মতান্তে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তাঁর মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা নির্মাণ করেন।জনশ্রুতি আছে যে-শাহ সুজা যখন ফিরোজপুরে মোরশেদ শাহ নেয়ামতউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতেন তখন উক্ত ইমারতের মধ্যবর্তী সুপ্রশস্ত কামরাটিতে বাস করতেন। তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে আরো নাম না জানা অনেক সমাধি দেখা যায়। যাদের পরিয় এখনো জানা যায় নি। তবে এদেরকে হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে ধারনা করা হয়।

গৌড়ের প্রাচীন কীর্তির মধ্যে এই শ্রেণীর ইমরাত এই একটিই পরিলক্ষিত হয়। কড়িকাঠের উপর খোয়া ঢালাই করে যার ছাদ ও কোঠা জমাট করা হয়েছিল। উল্লেখিত মসজিদ ও তাহখানার নিকটস্থ সরোবর দাফেউল বালাহর তীরে অবস্থিত। এই দুই ইমারত হতে দুইটি সিড়ি সরোবরের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ভবনটির উত্তর-পশ্চিমে আরও দুটি কাঠামো রয়েছে নিকটস্থটি একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং একটু উত্তরে অবস্থিত অপরটি ভল্টেড বারান্দা ঘেরা একটি গম্বুজ সমাধি। যেহেতু ভবনগুলো একই সময় একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল, সেহেতু সব ভবনকে একত্রে একটি একক ইউনিট বা একটি কমপ্লেক্স হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ভবনটি মূলত ইট নির্মিত। তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বিম ব্যবহৃত হয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে ভবনটিকে দেখলে একতলা মনে হয়, পূর্বদিক থেকে অবশ্য দ্বিতল অবয়বই প্রকাশ পায়, যার নিচতলার কক্ষগুলো পূর্বদিকে বর্ধিত এবং খিলানপথগুলো উত্থিত হয়েছে সরাসরি জলাশয়টি থেকে। ভবনের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি গোসলখানা যেখানে পানি সরবরাহ হতো একটি অষ্টভুজাকৃতির চৌবাচ্চার মাধ্যমে জলাশয় থেকে। উত্তর পাশে একটি ছোট পারিবারিক মসজিদ অবস্থিত, এর পেছনে রয়েছে একটি উন্মুক্ত কক্ষ যেটি একটি অষ্টভুজাকার টাওয়ার কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এ টাওয়ার কক্ষটি সম্ভবত ধ্যানের জন্য ব্যবহৃত হতো। অষ্টভুজাকার টাওয়ারটি সব কমপ্লেঙ্টিতে ভারসাম্য প্রদান করেছে। প্রাসাদটি প্লাস্টার করা এবং খোদাইকৃত। এসব অলঙ্করণ রীতি মোঘল আমলের।

চন্দ্রমহল


চন্দ্রমহল নামে একটি ভবনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় রঞ্জিতপুর গ্রামের কাছে একটি পিকনিক স্পট রয়েছে। এটি আসলে একটি চমৎকার শিল্প নিদর্শন। তাজমহলের আদলে তৈরি চন্দ্রমহল।
 ২০০২ সালে চন্দ্রমহলের প্রতিষ্ঠাতা সেলিম হুদা তার স্ত্রী নাসিমা হুদা চন্দ্রার নামানুসারে প্রায় ৩০ একর জমির উপরে এই ইকোপার্কটি তৈরী করেন। চন্দ্রমহলের সৌন্দর্য দেখে যে কোন পর্যটক মুগ্ধ হবেন। বিশেষ করে প্রখর রোদের আলো যখন মহলের উপরি অংশের সোনালী অংশে পরে তখন এটি দেখে মনে হয় দামী ধাতব পদার্থে নির্মিত হয়েছে মহলটি। মহলটি পানি দ্বারা বেষ্টিত। মহলে পৌছানোর জন্য পানির নিচ থেকেই নেয়া হয়েছে পাকা রাস্তা। 
রাস্তার মাঝপথে গেলেই দর্শণার্থীদের চোখে পরবে পুরু কাঁচের উল্টো পাশের বড় বড় মাছ। স্থানীয় লোকদের ধারনা শীত মৌসুমে সুন্দরবন দেখতে লাখ লাখ মানুষের আগমন ঘটে। আর সুন্দরবন যাওয়ার পথে চন্দ্র মহলের অবস্থান বিধায় সুন্দরবনের দর্শণার্থীদের একটি বড় অংশ চন্দ্র মহল দেখতে আসেন। যে কারনে অন্যান্য পার্কের তুলনায় চন্দ্রমহলে পর্যটকদের ভীর কিছুটা বেশি।পর্যটকদের জন্য এখানে নির্মান করা হয়েছে নানান প্রস্তর শিল্প, মৃত্তিকা শিল্প, বাশ ও বেত শিল্পের মানুষ ও প্রাণীর মূর্তি। মাটি দ্বারা নির্মিত হয়েছে পল্লী সংস্কৃতির নানান স্মৃতিকথা, গ্রামীণ নারীর জীবনযাত্রার বিমূর্ত ছবি ফুটে উঠেছে এ শিল্পে। জেলে, কৃষক, ধোপা ইত্যাকার নানান পেশাজীবী গ্রামীণ মানুষের মধ্যযুগের জীবনযাত্রা কেমন ছিল তার ধারনা দিতেই নির্মিত হয়েছে এ মাটির শিল্প।
 এখানে রয়েছে পানির উপর বাঁশের তৈরি কুটির ও রেস্তরা, ছোট ছোট দিঘীগুলোতে রয়েছে মাছ চাষ, পুকুরের মধ্যে ইট-সিমেন্টের তৈরি কাকড়া ও ঝিনুক, পানসী নৌকা, ১৯৭১ সালের রাজাকারের জন্য কৃত্তিম ফাঁসির মঞ্চ, ডাইনোসরের মূর্তি, কৃত্তিম রেল লাইন, বাঘ-ঘোড়া-হরিণের মূর্তি। পর্যটকদের জন্য রয়েছে পিকনিক স্পট। একটি কাঠের তৈরি বড় ঘর ও তার পাশে রয়েছে রান্নার সকল ব্যাবস্থা। দর্শণার্থীরা নিজেদের মত করে যাতে পিকনিক করতে পারে সে বিবেচনা করেই এ ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। 
ইকোপার্কের প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান প্রকারের সবজি চাষ, প্রচুর ফলজ বৃক্ষও রোপন করা হয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ। পার্কের চারধারে লাগানো হয়েছে অসংখ্য নারিকেল গাছ। আর এই বিভিন্ন প্রকারের গাছ ও সবজি চাষই ইকোপার্কের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে।বণ্য প্রাণীদের সাথে পরিচয় করানোর জন্য এখানে আনা হয়েছে অনেক প্রজাতির পশু-পাখি। এদের মধ্যে বানর, বনবিড়াল, হরিণ, তিতপাখি, তুর্কী মুরগী, সাদা ময়ূর, বক, বিভিন্ন প্রজাতির কুকুর ঈগল, মদন টাক পাখি, সাদা ঘুঘু-হাস পাখি, পেঁচা, বেজী, কবুতর, কোয়েল, কুমির ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য। 
পার্কের মূল মহলের মধ্যে রাখা হয়েছে নানান প্রত্নতত্ব। এদের মধ্যে বিশেষ করে দেশী-বিদেশী পুরনো মুদ্রা, ডাক টিকিট, যুদ্ধের অস্ত্র, বহুকাল আগের তৈরি ঘড়ি, প্রার্থণার অলংকার, ধর্মীয় পুরাকীর্তি, সিঁদুর দানী, পাথরের আসবাবপত্র, বিভিন্ন রঙের পাথর, শত বছরের পুরনো কলেরগান, সবচেয়ে ছোট গ্রামোফোন, বিরল পান্ডুলিপি, বাঁশ পোকা, বিভিন্ন প্রজাতির মৃৎ শিল্প, বিভিন্ন প্রকার ক্ষুদ্র পতঙ্গ, পাতা পোকা, ১৭০০-১৮০০ সালের পিতলের চুলের কাটা, রুপার চায়ের পাত্র, পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কোরআন শরীফ, আড় বাঁশি ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।
সময়সূচীঃ
প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চন্দ্রমহল ইকোপার্কটি খোলা থাকে।
টিকেট মূল্যঃ
প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা মূল্যের টিকিট কাটতে হবে।
খাওয়া দাওয়াঃ
পর্যটকদের চাহিদা পূরনের জন্য ইকোপার্কের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ৮-১০টি বিভিন্ন প্রকারের রেস্তরা।

ঐতিহ্যবাহী খালিয়া কুমার পল্লী


প্রতি দিন চাকা ঘোরাতে হয় । চাকার এক একটি পাকে চলে সংসার। কাঠের তৈরি চাকাটি কোটিপাক ঘুরছে তাতেও তাদের ভাগ্যের চাকা মরিচা ধরা । অভাব অনটন আর দুঃখ তাদের পিছু ছাড়ে না । পেশায় তারা কুমার বা পাল ।
 দিন দিন যে ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে তারা পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত । প্রযুক্তির হাওয়া বদলে ঘুরিয়ে মাটির তৈরি হাড়ি ,পাতিল, বাসন কোসনের প্রচলন দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে । তারপরও দেশে এমন এলাকা বা এমন গ্রাম আছে যেখানে এখনো বাংলার ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছে । এমন কি সে গ্রাম জুড়ে একটিই পেশা আদিকাল ধরে চলে আসছে । গ্রামটি মাদারীপুর জেলার খালিয়া ইউনিয়নের কুমার পাড়া বা কুমারপল্লী। পুরানো একটি ছোট গ্রাম । এ গ্রামে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা শতাধিকের উপরে।
 শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম হলেও কর্মঠ মানুষের সংখ্যা বেশি । গ্রামটিতে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি । মজার ব্যাপার গ্রামটিতে একটি পেশাই আদিকাল থেকে চলে আসছে । গ্রামের মানুষ সকাল থেকে গভীর রাত অবধি কাজ করে । গ্রামে বসবাসকারী শ’কয়েক লোকের মধ্যে সব বয়সী মানুষই এ পেশায় জড়িত । অর্থাৎ বসবাসকারী সব পরিবারই কুমার পেশায় নিয়োজিত পরিবার । গ্রামের সব ব্যস্ততায় সময় কাটায়কুমার পরিবারের সদস্যরা।
প্রতিটি বাড়ি তে চলে দিনভর মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল, ঢাকনা, কলস,পুতুল,ভাশি, ডাবর, ধুপদানি, প্রদীপ, থালা, সরা, পটে আকা লক্ষীর সরা,তাগাড়ি,জল ঘট,জলেরপট, খেলনা, কড়াই, ফুলের টব, পিঠা বানানোর সাজ, মুর্তি, প্রতিমা, চুলা, ইত্যাদি বানানোর কাজ । এছাড়া প্রতিটি বাড়ির চেহারাও একই রকম। একই কাজের জন্য ভাড়ির আশ পাশের পরিবেশ একই ধরনের গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে খোলা জায়গাগুলোতেই সারিসারি মাটির তৈরির হাড়ি পাতিল সাজানো যার সংখ্যা হাজার হাজার দেখে মনে হবে মাটির হাড়ি পাতিল আর মাটির একটি বিশাল পাহাড় । প্রায় বাড়ীতে ঢুকলে চোখে পড়বে হাড়ি আর মাটির তৈরির বাসন কোন গুলো কাচা ,অর্থাৎ পোড়ানো হয়নি আবার কোনো গুলো পুড়ে শুকিয়ে গ্রামের প্রতিদিনই কয়েকটি ট্রাক আসে এবং মাটির হাড়ি সাজানো ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। দুপুর বেলা গ্রামটিতে চলে দ্রুতগতিতে কাজ । তখন সব বাড়ী কুমাররা এক সঙ্গে কাজে নামেন । গ্রামের নারী পুরুষ সবাই মাটির তৈরির বাসন বানানোতে বেশ দক্ষ ।

 শিশু থেকে পৌঢ় সবার এ কাজ জানা ।মাটি ছ্যানা থেকে শুরু করে একদম হাড়ি বানানো পর্যন্ত সবকিছুতে সময় লাগে পাচ মিনিট এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি হাড়ি বানানো সম্ভব । তৈরিকৃত হাড়িটি কাঠদিয়ে ঠিক করে রোদে দিতে হয় । হাড়িটি আগুনে পুড়লে পুর্নাঙ্গ একটি হাড়ি । কুমার পল্লী হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সংখ্যা বেশী হলেও কাজ গুলো এখন হিন্দু মুসলমান দু ধর্মের লোকেরা সমান ভাবে করছে । 
জীবিকা নির্বাহে প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে রাত অবধি মাটির বাসন কোসন তৈরি করে চলছেন। তখন থেকে এখানে হিন্দু পাল বংশের আর্বিভাব ।
 পালদের আনা হয় প্রতিমা, মুর্তি ,হাড়ি পাতি বানানোর কাজের তবে শুধু রাজা -জমিদারদের জন্য । কিন্তু রাজা- জমিদারদের প্রথা উঠে যাওয়ার পর কুমার পল্লী গ্রামের কুমাররা বেকার হয়ে যায় । পরে তারা নিজেরা মাটির বাসন তৈরি করে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে রাস্তায় ঘুরেঘুরে বিক্রি করতে শুরু করেন । এ নিয়ম চলে আসছে অনেক বছর ধরে নিখুত হাতের ছোয়ায় মাটির বাসন কোসন বানানো সম্পর্কে তিনি বলেন ছোট বেলা থেকে চেষ্টা সাধনা করলেই এমন কাজ সহজে পারা যায় । তা ছাড়া এ বংশে যারা জম্ম গ্রহন করে ঈশ্বর প্রদও ক্ষমতা তাদের মধ্যে থেকে যায় এসব তৈরিতে।একটি হাড়িতে ৫ থেকে ১০টাকা লাভ হয় ।
 সংসার চালানোর জন্য এক একটি বাড়ীেেত প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজারেরও বেশী মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল বাসন কোসন বানানো হয় । কুমার পেশায় প্রধান গ্রামটিতে তরুন প্রজম্মের কাছে পড়া শোনা প্রাধান্য পেয়েছে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা একাজটিও চালিয়ে যাচ্ছে ।

মাধবপুর লেক

,
প্রকৃতিই পারে জীবনের রং পাল্টে দিতে,বাংলাদেশের সিলেটের মৌলভিবাজারের মাধবপুর লেক যেন তারই সত্যতা প্রকাশ করছে। চলুন না এই বর্ষায় ঘুড়ে আসি মাধবপুর থেকে। মাধবপুর লেকে যেতে যেতে চোখে পড়বে চোখজুড়ানো চা-বাগান।
সারি সারি চা-গাছ বুকে-পিঠে নিয়ে এদিক-ওদিকে দাঁড়ানো টিলা। সেসব টিলার মাঝেই টলমলে জলের হ্রদ। হ্রদে ভাসছে শাপলা-শালুক। ছায়াবৃক্ষের ডালে বসে ডাকছে পাখিরা। মাধবপুর লেকের এমন সৌন্দর্যে মন হারানোর কেমন একটা ভাব যে-কাউকেই পেয়ে বসবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে মাধবপুর লেকের সাকিন। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে ভানুগাছ-ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়ক দিয়ে মাধবপুর বাজার। বাজার থেকে ডান দিকে ঢুকে গেছে একটি সড়ক।
সড়ক ধরে কিছু দূর এগোতেই দেখা মেলে দলবদ্ধ বা দলছুট লোকজনের আনাগোনা। তাঁরা সবাই পর্যটক। একঘেয়ে জীবনে স্বস্তির খোঁজে তাঁরা এসেছেন সবুজ-শ্যামলে ঘেরা এই হ্রদ দেখতে।
মাধবপুর লেকে পর্যটকের আনাগোনা প্রায় প্রতিদিনেরই ঘটনা। এখানে এসে সবাই সবুজে মিশে যেতে চান। প্রাণভরে নেন শ্বাস। হ্রদের পানিতে আত্মছায়ার মাঝে নিজেকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ মেলে।
লালচে মাটির সড়কের দুপাশে মেহগনি, নিম, অর্জুনসহ নানা জাতের গাছ। গাছে চোখে পড়ে টিয়া পাখি। সবুজের সঙ্গে অপার মেলবন্ধন তাদের। রঙে-ঢঙে মিলেমিশে পালকে হাওয়া মাখছে তারা। অন্য পাখি যে নেই, তা নয়। দেখা মেলে ঘুঘু কিংবা শালিকের। অনেক অচেনা পাখিও এডাল-ওডাল করে বেড়ায়।
এখন বর্ষাকাল। শীত চলে গেছে কবে! নয়তো এই হ্রদে ডুব-সাঁতারে ঘুরে বেড়ানো পরিযায়ী পাখির দেখা মিলত। তবে সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি—এ রকম কিছু পাখি বারো মাসই এই হ্রদের স্থায়ী বাসিন্দা।
হ্রদের দুপাশের টিলাগুলোতে চায়ের গাছ। চা-বাগান যেন হ্রদকে দুই পাঁজর দিয়ে আগলে রেখেছে। এটি মূলত মাধবপুর চা-বাগানেরই অংশ। চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে চিরল পাতার ছায়াবৃক্ষ। হ্রদের কিনার ঘেঁষে চেনা-অচেনা অনেক ঝোপঝাড়। ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে হরেক রকমের মায়া লাগা বুনো ফুল।
হ্রদের পারে পারে চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। হ্রদের পার ঘেঁষে হাঁটার জন্য চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে সরু পথ। টিলার ওপর আছে তাঁবু। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি পেলে এখানে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। শীত মৌসুমে যেকোনো জায়গায় বসা যায়। কিন্তু বর্ষায় হয় তাঁবু, নয়তো সঙ্গের ছাতাটিই ভরসা।
টিলার ওপর থেকে যেদিকেই চোখ যায়, দেখা মেলে বনের নীল রেখা। অনেক দূরে গিয়ে নীল রেখা যেন ছুঁয়েছে আকাশের সীমা!
মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান, আর বুনো নির্জনতার আমেজ মেলে।
ছুটিতে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে অনেকেই মাধবপুর লেকে ছুটে আসেন। তবে এখানে রাত কাটানোর সুযোগ নেই। সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়তে হয়।
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের নূরজাহান চা-বাগানের পথ দিয়েও মাধবপুর লেকে যাওয়া যায়। পথটা পাহাড়ি আর সবুজে মোড়ানো। এই পথে চোখজুড়ানোর নানা রসদ আছে। শান্ত-সবুজ চা-বাগানের দেখা মিলবে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গভীর বনটাও একনজর দেখে নেওয়া যাবে।
ভানুগাছ-ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়কে একটি ঐতিহাসিক স্থান আছে। সড়কের শেষ প্রান্তে ধলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ রয়েছে। স্মৃতিসৌধের স্থানটির দূরত্ব মাধবপুর লেক থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার মতো দক্ষিণে।

মাধবপুর লেকে যেতে হলে ট্রেন বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জে আসতে হবে। তারপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে মাধবপুর লেক। প্রাইভেট কার বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সেখানে যাওয়া যায়। রাতে থাকতে হলে শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে।

ভরতের দেওল



চলো না ঘুরে আসি অজানাতে! অনুসন্ধানী মনের জানালা খুলতে বা ভ্রমণপিপাসু মনের ক্ষুধা মেটাতে আমরা সবাই প্রতি বছর কোনো না কোনো দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে বের হই। ভ্রমন যাদের নেশা,
বেড়ানোর সুযোগ এলে তারা পাখা মেলে উড়িয়ে দেন মনের পর্যটক সত্ত্বাকে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল; যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরত ভায়নায় অবস্থিত ভরতের দেউল পর্যটকদের জন্য হতে পারে একটি দর্শণীয় স্থান। উপজেলা সদর হতে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোন ভদ্রানদীর তীরে গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না গ্রামে ভরতের দেউল অবস্থিত।
রাজা দশরথের দ্বিতীয় স্ত্রী রানী কৈকেয়ীর গর্ভজাত পুত্র ভরত রাজার নাম অনুসারে ভরতের দেউল নামকরণ করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
খুলনা-যশোর সীমান্তে কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদীর পশ্চিম তীরে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন যুগের অনেক নিদর্শন নিয়ে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে কালের স্বাক্ষী হয়ে প্রায় আঠারো’শ বছর আগে থেকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ভরত রাজার এই দেউল।
কীভাবে যাবেনঃ
ভরতের দেওল দেখতে হলে আপনি যেখানে থাকেন না কেন, আপনাকে প্রথমে খুলনার জেলার চুকনগরে আসতে হবে।
সেখান থেকে ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান অথবা মোটরসাইকেলে করে আপনাকে ভরত ভায়না নামক স্থানে যেতে হবে।
সেখানে যাওয়ার পর যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেবে ভরতের দেউল কোথায়।
সৌন্দর্যের দিক থেকে কোনো কমতি নেই স্থাপনাটির।

রকস্ মিউজিয়াম



উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে বছরজুড়ে থাকে দেশীয় এবং ভিনদেশি পর্যটকদের আনাগোণা। জেলার বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান ঘুরে পর্যটকদের চোখ আটকে যায় দৃষ্টি নন্দন পাথরের জাদুঘরে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের একমাত্র এ পাথরের জাদুঘর। এখানে রয়েছে নতুন এবং পুরনো পাথরের রকমারি সমাহার। তবে নামকরণ এবং পরিচয়ে পাথরের এ জাদুঘর ‘রকস্ মিউজিয়াম’ নামেই পরিচিত।

পাথরের গায়ে লেখা ইতিহাস থেকে পরিচিত হচ্ছেন ঐতিহ্যের সঙ্গে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের একটি কক্ষে ১৯৯৭ সালে রকস্ মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. নাজমুল হক। এ মিউজিয়ামে রয়েছে হাজার বছরের নানান আকৃতির পাথরসহ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
প্রত্যেকটি পাথরের পাশে লেখা রয়েছে কোথা থেকে এবং কারা সংগ্রহ করেছেন এ মূল্যবান প্রত্নসম্পদ। এখানে রয়েছে আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, নুড়ি পাথর, সিলিকা নুড়ি ও সিলিকা বালি, হলুদ ও গাঢ়
হলুদ বালি, কাঁচবালি, খনিজবালি, লাইমস্টোন, পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শিলাসহ আরও অনেক প্রত্নসম্পদ।

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের মূলফটক পার হলে ডান পাশে দেখা যায় ছোটবড় পাথরে সাজানো মাঠের একাংশ। পাথরের এ জাদুঘরের সামনে গোল চক্করের অবয়বে বেশ কয়েকটি বড় আকারের পাথর বসানো রয়েছে। এসব পাথরের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর। এর বর্ণনা রয়েছে পাশের ছোট্ট নাম ফলকে।
দুই প্রকার গ্যালারি নিয়েই এ পাথরের জাদুঘর। ঘরের ভেতরের গ্যালারিতে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, তরঙ্গায়িত চ্যাপ্টা পাথর, লাইমস্টোন এবং কঠিন শিলা। রয়েছে আদিবাসীদের ব্যবহৃত পণ্য সামগ্রী, নদীর নিচে ও ভূগর্ভে পাওয়া অশ্মীভূত কাঠ, প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো ইমারতের ইট-পাথরের মূর্তি। রয়েছে পোড়ামাটির নকশা। পাথরের এ জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ আস্ত শাল গাছের বিশাল আকৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী ডিঙ্গি নৌকা। প্রায় হাজার বছরের পুরোনো ২৫ ফুট দৈর্ঘ ডিঙ্গি নৌকাটি ১০৯৯ সালে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চাওয়াই নদীর মাহানতের ঘাটের ৮ ফুট নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়।

এটি একটি আস্ত শালগাছ খোদাই করে নির্মাণ করা হয়। প্রাচীনকালে আদিবাসীরা এই নৌকাটি ব্যবহার করতেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আর বাইরের গ্যালারিতে রয়েছে বড় আকারের বেলে পাথর, গ্রানাইট পাথর, কোয়ার্জাহিট, ব্যাসল্ট, শেল, সিলিকায়িত কাঠ বা গাছ থেকে রুপান্তরিত পাথর। এসব পাথরের কোনোটি গোলাকার, আবার কোনো কোনোটি চেপ্টা অথবা লম্বাকার। পাথরের গায়ে আঁকা রয়েছে নানা রকমের সাংকেতিক চিহ্ন।
জাদুঘরের বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আদিযুগে ব্যবহৃত দা, কাচি, কদালসহ ঐতিহাসিক নানান নিদর্শন।
দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা পঞ্চগড়ে ছুটে যান উত্তরের শেষ সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা। বাংলাবান্ধার জিরোপয়েন্ট, স্থলবন্দর, তেঁতুলিয়ার চা বাগান ঘুড়ে তারা দেখতে আসেন দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর ‘পঞ্চগড় রকস্ মিউজিয়াম’। খুটে খুটে তারা পাথর দেখেন
বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর বা রকস

কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড় যাবার জন্য বিভিন্ন ডে-নাইট বাস সার্ভিস চালু আছে। নন-এসি হানিফ অথবা নাবিল পরিবহনণের বাসে সরাসরি পঞ্চগড়।এছাড়া আরও বাস রয়েছে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সরাসরি পঞ্চগড় যাবার সুযোগ নেই, এক্ষেত্রে সন্ধ্যায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিয়ে দিনাজপুর বা পার্বতীপুর যেতে হবে। দিনাজপুর যেতে প্রায় ভোর ৬ টা বাজবে, এরপর ৩ ঘন্টার বাস জার্নিতে চলে যান পঞ্চগড়। এছাড়া দিনাজপুর কিংবা পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশান থেকে লোকাল ট্রেন ও ডেমু ট্রেন পঞ্চগড় যায়। সময় মিলে গেলে সে সব ট্রেনে চলে যেতে পারেন পঞ্চগড়।
কোথায় থাকবেন
রাত্রি যাপনের জন্য পঞ্চগড়ে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল পাবেন।
কোথায় খাবেন
যদি ট্রেনে যাত্রা করেন তবে দিনাজপুরে রুস্তম কিংবা ফাইভ স্টার হোটেলের গরুর ভুনা মাংস মিস করা ঠিক হবে না। এছাড়া দিলশাদ হোটেল আর রোলেক্স ফুডের খাবার চেখে দেখতে পারেন। পঞ্চগড় শহরে খাবার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল পাবেন তবে মৌচাক হোটেলের খাবার খেয়ে দেখতে পারেন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।

রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া




প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি কালের গহ্বরে ঢাকা পড়লেও এর নিদর্শন চিরকাল অম্লান হয়ে থাকে। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার জমিদার বাড়িটি তেমনই একটি স্মৃতিচিহ্ন। এ বাড়িটিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে রূপগঞ্জের ইতিহাস, কৃষ্টি, সভ্যতা ও আজকের এই কোলাহলপূর্ণ জন বসতি। 
শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে মহাকালের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ জমিদার বাড়ি। ছায়া নিবিড় পরিবেশে গড়ে ওঠা মনোমুগ্ধকর এ জমিদার বাড়ির যে কোন ভ্রমণপিপাসুর মন কাড়ে।
গোড়াপত্তনের ইতিহাস : রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার মুড়াপাড়া এলাকায় ৫২ বিঘা জমির উপর এই প্রকাণ্ড জমিদার বাড়ি অবস্থিত। 

জমিদার বাবু রাম রতন ব্যানার্জী তৎকালীন মুড়াপাড়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদারদের ঊর্ধ্বতন ষষ্ঠ পুরুষ। তিনিই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। রাম রতন ব্যানার্জীর পুত্র পিতাম্বর ব্যানার্জী এবং তৎপুত্র প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী শাহজাদপুরের জমিদারি ক্রয় করে জমিদারি বর্ধন করেন। কথিত আছে, জমিদারি ক্রয় সূত্রে প্রতাপ ব্যানার্জীর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকা নাথ ঠাকুরের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল।
 ১৮৮৯ সালে প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পৈতৃক এজমালি পুরনো বাড়ি ত্যাগ করে আলোচ্য এ প্রাসাদের পেছনের অংশ নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ সালে প্রাসাদের সম্মুখ অংশের একতলা ভবন নির্মাণ ও সেখানে ২টি পুকুর খনন করার পর হƒদরোগে মারা যান। তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম গ্রাজুয়েট। বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর দুই সুযোগ্য পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী ১৯০৯ সালে প্রাসাদটির দোতলার কাজ সম্পন্ন করেন। এ অঞ্চলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর নাম সমধিক প্রসিদ্ধ। কারণ তিনি দু’বার দিল্লির কাউন্সিল অব স্টেটের পূর্ববঙ্গ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। 
জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী প্রজা সাধারণের কল্যাণসাধনের জন্য স্থাপন করেছেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পুকুর । ১৯৪৭ সালে তৎকালীন জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। ফলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর প্রতাপশালী সেই রাজবাড়িটি বিরান হয়ে যায়।

মেঘলা পর্যটন এলাকা





মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবন শহরের প্রবেশদ্বার বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পাশে অবস্থিত। বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের ৫ কি:মি: আগে মেঘলা পর্যটন এলাকাটি অবস্থিত। 
মেঘলায় চিত্তবিনোদনের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে রয়েছে- চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, সাফারি পার্ক, প্যাডেল বোট, ক্যাবল কার, উন্মুক্ত মঞ্চ ও চা বাগান। এখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চূঁড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। 


বেশ কিছু উঁচু নিচু পাহাড় দ্বারা ঘেরা একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। ঘন সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটকদের প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রবেশ মূল্যঃ
মেঘলা (Meghla) পর্যটন কমপ্লেক্সে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা এবং গাড়ির পার্কিংয়ের জন্য ১৫০-২০০ টাকা।
কীভাবে যাবেনঃ
প্রথমে আপনাকে বান্দরবান (Bandarban) শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ২২০টাকা ভাড়া রাখা হয়।এরপর বান্দরবান বাস ষ্টেশন থেকে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স যেতে লোকাল বাসে জনপ্রতি ১০-১২ টাকা এবং টেক্সি রিজার্ভ ১০০-১২০ টাকা, এবং ল্যান্ড ক্রোজার, ল্যান্ড রোভার ও চাঁদের গাড়ী ৪৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।

মিরসরাই এর নয় স্টেপ এর ঝর্না




বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। মিরসরাই এর এই নয় স্টেপ এর ঝর্না বিস্ময়কর। খৈয়াছড়া – আকার আকৃতি ও গঠনশৈলির দিক দিয়ে এটা নিঃসন্দেহে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণাগুলোর ১টি । এর মোট ৯ টি মুল ধাপ এবং অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ প্রমান করে যে এমন আর একটা ঝর্ণাও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। খৈয়াছড়াতে সব সময় জ্বলে (এমন কি বৃষ্টিতেও) এমন একটি পাহাড় আছে, সেখানে আগুন কখনও নিভে না। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করছেন। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে খৈয়াছরা ঝর্ণায়। অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ, যা বাংলাদেশের আর কোন ঝর্ণাতে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। তাই ‘খৈয়াছড়া’ কে বলা হয় বাংলাদেশের ‘ঝর্ণা রাণী‘।

জায়গাটা মিরসরাই ঠাকুরদা দিঘির আগেই পড়ে। গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকা বাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নেয়া যায় নিঃসন্দেহে। মিরসরাইয়ের এই খৈয়াছড়ায় নয় স্তরের ঝর্ণা দেখতে দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় পড়েছে। দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝর্ণাটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছে হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক। খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা।


 মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝর্ণার অবস্থান। এর মধ্যে এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাকো, ক্ষেতের আইল, আঁকাবাকা পাহাড়ী পথ, ছরা, অন্তত ৪টি পাহাড় পেরিয়ে যখন ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে যখন গা ভিজাবে পর্যটক, তখন মনে হবে পথের এই দুরত্ব খুব সামান্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পাথরের যায়গা পিচ্ছিল থাকতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন। মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে ফিরে আসা অনেক কঠিন হবে।

Travel

ঘুরে আসুন হামহাম জলপ্রপাত

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভুমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নতুন সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাত একনজর দেখার জন্য দেশের বিভ...