জাদুকাটা নদী
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের অন্যতম আকর্ষণ জাদুকাটা নদী। এই নদীর পূর্ব নাম রেণুকা। জনশ্রুতি আছে, এই নদীতে কোনো এক গ্রামের বধু তার শিশুপুত্র জাদুকে কোলে নিয়ে জালে ধরা অসংখ্য মাছ কাটার একপর্যায়ে মাছের বদলে অন্যমনস্ক হয়ে শিশুপুত্রকে কেটে ফেলেন। সেই থেকে এই নদীর নাম যাদুকাটা অথবা জাদুকাটা নদী।
জাদুকাটা নদীর জল শান্ত ও শীতল। স্বচ্ছ জলের কারণে নদীর তীর থেকে জলের তল, বালুকণা পর্যন্ত দেখা যায়। তবে অসংখ্য লোকের চলাচল, ইঞ্জিনের নৌকার কালো ধোঁয়ার কারণে এই নদীর পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে জাদুকাটা নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এই নদী থেকে অনেকগুলো খালের সৃষ্টি হয়েছে এবং এগুলো সুরমা নদীতে মিলিত হয়েছে।জাদুকাটা নদীর জলে যেন অপরূপ মায়া লুকায়িত।
নদীর ওপারে চরটি পাহাড় ও সবুজে ঘেরা। পাহাড়ের উপর দিয়ে মেঘেরা ভেজা তুলোর মতো ছুটে যায় আপন ঠিকানায়। কখনো বা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। জাদুকাটা নদীর পাশেই রয়েছে ১৫০ ফিট উঁচু টিলা যা স্থানীয়দের কাছে বারিক টিলা বা বারিক্কা টিলা নামে পরিচিত। বারেক টিলায় বসবাস করে বেশ কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী।জাদুকাটা নদীর একপাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ বালুচর।
এখানে প্রতিদিন শত শত নৌকা ও লোকজন আসে বালু তোলার জন্য। তাছাড়া এই নদী থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পাথর উত্তোলন করে স্থানীয়রা। এই দৃশ্যটিও চমৎকার। মাঝিদের বয়ে চলা, পাথর উত্তোলনকারীদের পাথর উত্তোলন, বালু উত্তোলনকারীদের বালু উত্তোলন, জেলেদের মাছ ধরা প্রতিটি দৃশ্যই চমৎকার।সুনামগঞ্জের উত্তর-পশ্চিমে তাহিরপুরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত এই নদীর প্রতি বাঁকে রয়েছে মায়ার পরশ, জাদুর পরশ।
ভরা বর্ষায় জাদুকাটা নদী কানায় কানায় পরিপূর্ণতা লাভ করে। পাহাড়ি ঝর্ণা, সবুজ বন-বনানী, পাহাড়, তীরবর্তী গ্রামীণ জনপদ ইত্যাদি সবকিছুই উপভোগ করা যায় এই নদীর তীর থেকে। বর্ষায় পাহাড়ি ঝর্ণার পানিও যৌবন ফিরে পায়। উদ্দামতা নিয়ে আছড়ে পড়ে নিচের দিকে।বর্ষাকালে নৌকায় করে ঘোরা ও নদীর অপরূপ রূপ দেখা যায়। জাদুকাটা নদীতে বেড়াতে গেলে অনেক বন্ধু বান্ধব নিয়ে যাওয়া ভালো। বিশেষ করে নৌকায় ঘোরাঘুরি করার সময় মানুষ বেশি থাকলে উপভোগ করা যায় বেশি।
নৌকায় বসে বসে জলের রূপ দেখার পাশাপাশি দেখা যাবে চারপাশের প্রকৃতি ও মানুষের ব্যস্ততার চিত্র।জাদুকাটা নদীতে সানন্দে গোসল করা যায়। নদীর স্বচ্ছ নীল জল দেখে আপনার জলে নামার ইচ্ছে হবেই। এখানে কোনো প্রকার অনিশ্চয়তা নেই, অনিরাপত্তা নেই। চাইলে বন্ধুদের নিয়ে গোসল করতে পারেন। তবে নিচে পাথর, কয়লা, বালি আছে বলে একটু সাবধানে থাকতে হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Travel
ঘুরে আসুন হামহাম জলপ্রপাত
প্রকৃতির অপরূপ লীলাভুমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নতুন সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাত একনজর দেখার জন্য দেশের বিভ...

-
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষা শেরপুর জেলার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা...
-
প্রতি দিন চাকা ঘোরাতে হয় । চাকার এক একটি পাকে চলে সংসার। কাঠের তৈরি চাকাটি কোটিপাক ঘুরছে তাতেও তাদের ভাগ্যের চাকা মরিচা ধরা । অভাব অন...
-
বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারেজ লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলাধীন গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী এবং পার্শ্ববর্তী নী...
No comments:
Post a Comment