বাগেরহাট একটি সুন্দর মসজিদের শহর



ইতিহাসের এক বীর যোদ্ধা, যিনি পরবর্তী সময়ে একজন ধর্ম প্রচার ও প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুন্দর সুন্দর মসজিদ সহ প্রাচীন বাগেরহাটে একটি সুন্দর মসজিদের শহর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
তিনি হলেন হয়রত খানজাহান আলী।
হয়রত খানজাহান আলী তাঁর প্রথম জীবনে সেনাপতি হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন।
কিন্তু পরবর্তী জীবনে তিনি একজন ধর্ম প্রচার ও প্রশাসক হিসেবে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ছিলেন।
দিল্লীতে জন্মগ্রহণ করা খানজাহান আলী তাঁর বাল্য কালের শিক্ষা জীবনে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে লেখা পড়া করেছিলেন।
যার কারণে পরিণত বয়েসে তিনি ইসলাম ধর্মে বিশেষ পান্ডিত্য লাভ করেছিলেন।
হিন্দু শাসিত বাংলা বিজয়ের পর হয়রত খানজাহান আলী বাংলার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।
যার কারণে তিনি বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার নামক স্থান থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে যশোর শহরের মুড়ুলী স্থানে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন।
মূলত মুড়ুলী বাজারটি সেই সময় থেকে গড়ে উঠেছিল।
এরপর খানজাহান আলী সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চল বাগেরহাটে গড়ে তুলেছিলেন একটি মসজিদের শহর।
যে শহরটি আজও পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া শহরের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
ঘুরে আসতে হয়রত খানজাহান আলীর প্রতিষ্ঠিত সেই প্রাচীন শহরের ধ্বংসস্তুপ থেকে।
যেখানে আজও কালের সাক্ষী হিসেবে আছে অনেক গুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
শুধু তাই নয়, এখানে অবস্থিত আছে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মানে ভূষিত ষাটগুম্বজ মসজিদ।
এছাড়া হয়রত খানজাহান আলীর মাজার, দিঘী আর দিঘীর সচ্ছ জলের বিরল প্রজাতির কুমির।
আশা করি আপনার খুব ভালো লাগবে।
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে খুব সহজেই আপনি আসতে পারবেন বাগেরহাট শহরে।
এছাড়া বাগেরহাট শহরের অতি নিকটে অবস্থিত খুলনা শহর সহ মোংলা সামুদ্রিক বন্দর ও সুন্দরবন অবস্থিত।
আপনি ইচ্ছা করলে এগুলোও ভ্রমণ করতে পারবেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও যৌবনের সঙ্গে মিশে আছে বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল।



কলকাতার জোঁড়াসার্কোর বিখ্যাত বাঙালী পরিবারে জন্ম নোবেল বিজয়ী কবির আদি নিবাস ছিল খুলনার রুপসা নদীর অপর পাড়ের পিঠাভোগ গ্রামে।
সেখানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের অধীনে আছে প্রাচীন কিছু স্থাপনা।
অন্যদিকে কবি পত্নী মৃণালিনী দেবীর বাবার বাড়ী খুলনা জেলার ফুলতলা থানাতে।
যৌবনে কবি জমিদারী পরিচালনা করতে অবস্থান করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে।
শুধু কি জমিদারী পরিচালনা।
কুষ্টিয়া শহরে তিনি একটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও খুলেছিলেন, সেখানেও আছে কবি স্মৃতির " টগর লজ"।
কুষ্টিয়া বড় বাজার রেল লাইন পার হবার পর হাতের বামে কবি আজিজুল হক রোডে অবস্থিত এই স্থাপনাটি।
এছাড়া কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর অপর পারে শিলাইদহ গ্রামে অবস্থিত আছে " রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী"।
যেখানে বসে কবি রচনা করেছেন তাঁর বিশাল সাহিত্য কর্মের একটা অংশ।
এছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিত আছে রবীন্দ্র কাছারী বাড়ী।
যেখানেও অবস্থানে কবি রচনা করেছেন তাঁর বিশাল সাহিত্য কর্মের কিছু অংশ।
তবে নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার পতিসর গ্রামে রয়েছে কবির বৃহৎ কর্ম।
এখানেই তিনি শিক্ষা আর কৃষি উন্নয়নে স্কুল, কৃষি ব্যাংক আর চিকিৎসার জন্যে ফ্রী হাসপাতাল তৈরী করেছেন।
এমনকি কবি তাঁর নোবেল পুরস্কার বিজয়ের অর্থ খরচ করে গেছেন অবহেলিত, নিরীহ মানুষের কল্যাণে।
এখানেই তিনি রচনা করেছেন তাঁর বিশাল সাহিত্য কর্মের একটি বড় অংশ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ এবং ঠাকুর পরিবারের উজ্জ্বল নক্ষত্র দ্বারকানাথ ঠাকুর 1831 সালে এই অঞ্চলে জমিদার ক্রয় করার পর 1891 সালে কবি জমিদার হয়ে এসেছিলেন এই অঞ্চলে।
নাগর নদীর বুকে পাল তোলা বজরা নৌকা যোগে কবি ঘুরে বেড়িয়েছেন বিল অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে।
খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছেন তাদের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা আর হতাশা।
পোকা মাকড়ের মতো বাস করা মানুষ গুলোর ছিল না শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাবার।
জমিদার কবি তাঁর দরদী মনে উপলব্ধি করেছেন তাঁর নিরীহ প্রজাদের।
যার কারণে জমিদার আর প্রজার মধ্যে গড়ে উঠা সম্পর্কে কবি বিলিন হয়েছেন প্রজার হৃদয়ে।
ঈশ্বররুপী কবি অসহায় মানুষের কল্যাণে খরচ করেছেন নিজের টাকা।
তেমনি সেই স্থাপনা ঘুরে এলাম।
নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার পতিসর গ্রামে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থাপনাটি।
বাংলাদেশ সরকার এখানে প্রচুর টাকা খরচ করে অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ গড়ে তুলেছেন।
এখনও আছে কবির প্রতিষ্ঠিত স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, কৃষি ব্যাংক।
নিদিষ্ট টিকিটের বিনিময়ে প্রবেশ দেখা মিলবে কবির জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি নিয়ে গড়ে তোলা জাদুঘর।
কবি পরিবারের প্রতিষ্ঠিত দ্বিতল বাড়ীতে গড়ে তোলা হয়েছে এই জাদুঘরটি।
রাত্রি যাপনের জন্য আছে বাংলো।
এখানে রবীন্দ্র ঠাকুরের বিভিন্ন স্মৃতি উপলক্ষে আয়োজিত হয় অনুষ্ঠান।
আশা করি আপনার ভালো লাগবে।
পরিবার - পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।

গৌরনদীর জমিদার বাড়ি



বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী গ্রামে ও জমিদার মোহন লাল সাহার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ীটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে একশত ষাট বছরের পুরনো সিংহমূর্তি খচিত দূর্গা মন্দির ও ভবন । ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ার পড়েও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেছে জমিদার বাড়ির উওরসূরীরা । 
বাড়ির প্রবেশদ্বাওে প্রাচীণতম সিংহমুর্তি খচিত সুবৃহৎ দূর্গা মন্দিরটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগত পর্যবেক্ষক ও ভক্তরা পূজা-অর্চনা করছেন । এতদাঞ্চলের মধ্যে এ দূর্গা মন্দিরটি সর্ববৃহৎ হওয়ায় প্রতিবছরই মহা ধূম ধামের সাথে এ মন্দিরে দূর্গাপূজা হয়ে আসছে । জমিদার বাড়ির উওরসূরীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে,গৌরনদী উপজেলার সদও থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট দুরত্বে আড়িয়াল খাঁ নদীর প্রশাখা গৌরনদী মীরের হাট নদীর তীরে প্রায় দুই বছর পূর্বে জমিদার মোহন লাল সাহা এ বাড়ীটি নির্মান করে বসবাস শুরু করেন । বাড়ির সামনেই রয়েছে সান বাঁধানো সুবিশাল একটি দীঘি । 
জমিদার থাকতেন প্রসন্ন ভবনে বর্তমানে প্রাচীণতম ক্ষনিষু ভবন ও মন্দিরটি থাকলেও তাতে নেই কোন জৌলুস । বাড়ির দেয়ালের পোষ্টার খসে খসে পড়ে যাচ্ছে । কোথাও কোথাও আগাছার সৃষ্টি হয়ে প্রাচীনতম ভবনের সাক্ষী হিসেবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে । বাড়ির সামনেই রয়েছে সিংহমূর্তিখচিত প্রাচীনতম একটি মন্দির । স্থানীয়রা জানান, তৎকালীন সময়ে উপমহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ মন্দির হিসেবে এ মন্দিরটিতে ভক্ত দর্শনার্থীরা পূজা অর্চনা করতে ভিড় করতেন । ৩০ গজ দৈর্ঘ্য ২০গজপ্রস্থ মন্দিরটিতে রয়েছে ৪৫ টি স্তম্ভ ১৮৫০ সালের দিকে জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহা মন্দিরটি করেছেন বাড়ির লোকজন জানান । জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহা ছিলেন জমিদার মোহন লাল সাহার পিতা । কারুকার্জ খচিত ঐতিহাসিক এ মন্দিরের ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে । খসে পড়ছে ভবনের দেয়ালের আস্তও । বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে । জমিদার বাড়ির উওরসূরী সুনীল সাহা , বাদল সাহা, উজ্জল সাহা ,সমীর সাহা ও রাজা রাম সাহা জানান , ১৯৭১ সালে পাক -হানাদার ও তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকাররা এ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুট পাট কওে । 
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পাইক -পেয়াদাদের ঘরবাড়ি । গুড়িয়ে দেয় দূর্গা মন্দিরের ছাদের ওপরের চারপাশের সিংহমুর্তিগুলো । জমিদার মোহনলাল সাহার পুত্র স্বর্গীয় মানিক লাল সাহার স্ত্রী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী অরুনা সাহা বলেন, তিনি কিশোর বয়সে এ বাড়ীতে বউ হয়ে এসেছিলেন । তৎকালীন সময়ে তার শ্বশুর মোহন লাল সাহা প্রভাব –প্রতিপওি সবই ছিল । ছিলো অসংখ্য পাইক -পেয়াদা । তাকে গায়ের ওজনের সমান স্বর্ণালংকারে জড়িয়ে পালকিতে করে নিয়ে আসা হয়েছিল । অযত্ন ও অবহেলায় সে পালকিটি আজো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।এলাকা বাসী জানান, এক সময় এবাড়িতে এ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের জন্য যাত্রা,জারি, সারি, ও পালাগানের আয়োজন করা হতো । 
হাজার হাজার মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল এ বাড়িটি । আজ তার কিছুই নেই । জমিদার মোহন লাল সাহার বিভিন্ন জন কল্যাণমূলক কাজের মধ্যে অন্যতম সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, বাড়ির পার্শ্ববর্তী অশোকাঠি নামক স্থানে নির্মিত পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় । ১৯৩৫ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় । বর্তমানে এ বিদ্যাপীঠটি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । বাড়িতে বসবাসকারী জমিদারের উওরসূরীরা অভিযোগ করেন প্রভাবশালী একটি মহল জমিদার বাড়িটি দখল করে আত্নসাতের জন্য যড়যন্ত্র শুরু করেছে । তারা সরকারী উদ্যোগে ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ জমিদার বাড়িটি রক্ষনাবেক্ষণ করাও দাবী জানিয়েছেন 

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা



পঞ্চগড় হলো বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়, যার তিন দিকেই ভারতের প্রায় ২৮৮ কিলোমিটার সীমানা-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এর উত্তর দিকেই ভারতের দার্জিলিং জেলা।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো আছে। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের।

জানা যায়, কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন।
ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এর পাশাপাশি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ একটি পিকনিক স্পট নির্মাণ করেছে।
ওই স্থান দুটি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্যবর্ধনের বেশি ভূমিকা পালন করছে।
সৌন্দর্যবর্ধনে এ স্থান দুটির সম্পর্ক যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্তসংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পট অবস্থিত।
ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়ালে আপনার চোখে পড়বে ভারত-বাংলাদেশের অবারিত সৌন্দর্য।
ওই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য আরো বেশি মনোরম হয়।
কখন যাবেন:
তেঁতুলিয়া থেকে বছরের সব সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না!
সাধারণত অক্টোবর এর মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত যখন আকাশে মেঘ থাকে না আবার কুয়াশাও পড়া শুরু হয়নি,শুধুমাত্র তখনই তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায় বরফে ঢাকা ধবল পাহাড়ের চুড়া – কাঞ্চনজঙ্ঘা
কিভাবে যাবেন:
সরাসরি পঞ্চগড় যেতে হলে আপনি হানিফ কিংবা নাবিল পরিবহনে যেতে পারেন।
ভাড়া পড়বে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে। বাসগুলোতে যেতে পারেন।
যদি এসি বাসে যেতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে গ্রীন লাইন, আগমনী, টি-আর ট্র্যাভেলস বাসগুলো। ভাড়া লাগবে ৭৫০-৮০০ টাকার মতো। তবে সমস্যা হলো এই বাসগুলো যায় রংপুর পর্যন্ত।
রংপুর থেকে পঞ্চগড়ে আপনাকে আলাদা পরিবহনে যেতে হবে।
এখানকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর জন্য পঞ্চগড় শহর থেকে গাড়ি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়া ভালো।
সারা দিনের জন্য এসব জায়গা ঘুরতে রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা আর মাইক্রো বাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন এবং শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ায় বাস চলাচল করে সারাদিন,
ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়াও ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় সরাসরি চলাচল করে হানিফ ও বাবুল পরিবহনের বাস, ভাড়া ৫০০ টাকা।
পঞ্চগড় বা তেঁতুলিয়ার পথে কোনো এসি বাস নেই।
তেঁতুলিয়ায় নেমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চা বাগান বা আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির জন্য স্কুটার ভাড়া করাই ভালো।
কোথায় থাকবেন:
পঞ্চগড়ে অনেক হোটেল আছে, ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা।
এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এসি কক্ষ।
তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদী তীরের ডাকবাংলোতে থাকার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা।
বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে, এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। এখানে প্রতি কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা।

৩০০ বছরের বেশী পুরনো ঝাউদির গিরি


মাদারীপুরের সমতল ভূমিতে কোন পাহাড় বা গিরি নেই বলেই লোকজন হয়ত উঁচু এই স্তম্ভটির নাম রেখেছিল গিরি । প্রায় ৬০ ফুট উঁচু এই স্তম্ভ টিকে বা কারা নির্মান করে ছিল তার সঠিক ইতিহাস আজও জানা যায়নি ।স্তম্ভ টি কী কাজে ব্যবহৃত তাও সঠিকভাবে কেউ বলতে পারে না। তবে সু উচ্চ এই স্তম্ভ টি যে ৩শ”বছরের বেশী আগে নির্মিত হয়েছিল । এব্যাপারে কারোও দ্বিমত নেই ।
এই গিরি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি মৌজায় অবস্থিত । জেলা শহর থেকে ২ কিঃমি দক্ষিনে এর অবস্থান ।গিরিটি নির্মানের সঠিক দিন তারিখ জানা যায় না গেলেও অনেকের ধারনা, ১৭২০ থেকে ১৭২৪ সালের মধ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল ।

কারও কারও মতে নবাব আলীবদ্দী খাঁ এগিরি নির্মাতা । আবার জন শ্র“তি রয়েছে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এ অঞ্চলে মগদের আগমন ঘটে । তারা এই অঞ্চলে বসতি গড়ে ছিল এবং বহিঃ শত্র“দের আগমন থেকে নিজেদের রক্ষা ও নজরদারী করার জন্য এই টাওয়ার নির্মান করেছিল ।অনেকেবলে , কোন এলাকায় হানা দিয়ে নিজেদেও আস্তানায় ফেরার জন্যও তারা এটিকে চিহৃ হিসেবে ব্যবহার করতো । অন্যদিকেনবাব আলীবর্দী খাঁ-ই যে এর নির্মাতা তাও সঠিকভাবে বলা মুশকিল কেন এটা নির্মান করা হয়েছিল তাও বলা দুস্কও । তবে এলাকার একাধিক প্রবীন ব্যাক্তির কাছ জানা গেছে ,জমি জমার সীমানা নিধারনের জন্য তৎকালীন সময়ে এ গিরি নির্মান করা হয় ।
বর্তমানে এ অঞ্চলের মূল সীমানা পিলার বলে পরিচিতি লাভ করেছে। এমূল পিলার থেকে মাফ নিয়ে দূর দূরান্তের মৌজার সীমানা পিলার স্থাপন করা হতো । এখনও কোন মৌজায় জমির পরি মাপে বিরোধ দেখা দিলে এ গিরিকে মূল পিলার ধরে মাপের সমস্যা সমাধান করা হয়। গিরিটির উচ্চতা ৬০ ফুট । দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট ও প্রস্থে ৬ফুট । এটি চুন,সুরকি, ও পাথলা ধরনের ইট দিয়ে তৈরি । ২ শতাংশ জমির উপর গিরির অবস্থান । নানান কারনে গিরিটির ওপ থেকে প্রায় ৫থেকে ৬ফুটধসে গেছে । স্তম্ভটি মাটির নিচেও প্রায় ৩থেকে ৪ ফুট দেবে গেছে । এই স্তম্ভে ভিতরে ফাঁকা। পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে । তবে বর্তমানে খুরই জরার্জীন অবস্থায় থাকায় এর মধ্যে স্ব শরীওে ঢুকে দেখা বিপদজনক বলেই এলাকাবাসী মনে করেন

জাদুকাটা নদী


সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের অন্যতম আকর্ষণ জাদুকাটা নদী। এই নদীর পূর্ব নাম রেণুকা। জনশ্রুতি আছে, এই নদীতে কোনো এক গ্রামের বধু তার শিশুপুত্র জাদুকে কোলে নিয়ে জালে ধরা অসংখ্য মাছ কাটার একপর্যায়ে মাছের বদলে অন্যমনস্ক হয়ে শিশুপুত্রকে কেটে ফেলেন। সেই থেকে এই নদীর নাম যাদুকাটা অথবা জাদুকাটা নদী।

জাদুকাটা নদীর জল শান্ত ও শীতল। স্বচ্ছ জলের কারণে নদীর তীর থেকে জলের তল, বালুকণা পর্যন্ত দেখা যায়। তবে অসংখ্য লোকের চলাচল, ইঞ্জিনের নৌকার কালো ধোঁয়ার কারণে এই নদীর পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে জাদুকাটা নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এই নদী থেকে অনেকগুলো খালের সৃষ্টি হয়েছে এবং এগুলো সুরমা নদীতে মিলিত হয়েছে।জাদুকাটা নদীর জলে যেন অপরূপ মায়া লুকায়িত।
 নদীর ওপারে চরটি পাহাড় ও সবুজে ঘেরা। পাহাড়ের উপর দিয়ে মেঘেরা ভেজা তুলোর মতো ছুটে যায় আপন ঠিকানায়। কখনো বা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। জাদুকাটা নদীর পাশেই রয়েছে ১৫০ ফিট উঁচু টিলা যা স্থানীয়দের কাছে বারিক টিলা বা বারিক্কা টিলা নামে পরিচিত। বারেক টিলায় বসবাস করে বেশ কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী।জাদুকাটা নদীর একপাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ বালুচর। 

এখানে প্রতিদিন শত শত নৌকা ও লোকজন আসে বালু তোলার জন্য। তাছাড়া এই নদী থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পাথর উত্তোলন করে স্থানীয়রা। এই দৃশ্যটিও চমৎকার। মাঝিদের বয়ে চলা, পাথর উত্তোলনকারীদের পাথর উত্তোলন, বালু উত্তোলনকারীদের বালু উত্তোলন, জেলেদের মাছ ধরা প্রতিটি দৃশ্যই চমৎকার।সুনামগঞ্জের উত্তর-পশ্চিমে তাহিরপুরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত এই নদীর প্রতি বাঁকে রয়েছে মায়ার পরশ, জাদুর পরশ।

 ভরা বর্ষায় জাদুকাটা নদী কানায় কানায় পরিপূর্ণতা লাভ করে। পাহাড়ি ঝর্ণা, সবুজ বন-বনানী, পাহাড়, তীরবর্তী গ্রামীণ জনপদ ইত্যাদি সবকিছুই উপভোগ করা যায় এই নদীর তীর থেকে। বর্ষায় পাহাড়ি ঝর্ণার পানিও যৌবন ফিরে পায়। উদ্দামতা নিয়ে আছড়ে পড়ে নিচের দিকে।বর্ষাকালে নৌকায় করে ঘোরা ও নদীর অপরূপ রূপ দেখা যায়। জাদুকাটা নদীতে বেড়াতে গেলে অনেক বন্ধু বান্ধব নিয়ে যাওয়া ভালো। বিশেষ করে নৌকায় ঘোরাঘুরি করার সময় মানুষ বেশি থাকলে উপভোগ করা যায় বেশি। 

নৌকায় বসে বসে জলের রূপ দেখার পাশাপাশি দেখা যাবে চারপাশের প্রকৃতি ও মানুষের ব্যস্ততার চিত্র।জাদুকাটা নদীতে সানন্দে গোসল করা যায়। নদীর স্বচ্ছ নীল জল দেখে আপনার জলে নামার ইচ্ছে হবেই। এখানে কোনো প্রকার অনিশ্চয়তা নেই, অনিরাপত্তা নেই। চাইলে বন্ধুদের নিয়ে গোসল করতে পারেন। তবে নিচে পাথর, কয়লা, বালি আছে বলে একটু সাবধানে থাকতে হবে।

পুঠিয়া রাজবাড়ী বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ী


পুঠিয়া রাজবাড়ী বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ী হচ্ছে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম।১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।

সপ্তদশ শতকে মোগল আমলে তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পুঠিয়া জমিদারি ছিল প্রাচীনতম। কথিত যে জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের (১৬০৫—২৭ খ্রি.) কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করার পর সেটি পুঠিয়া রাজবাড়ীরূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি ভাগ হয়। সেই ভাগাভাগিতে জমিদারের বড় ছেলে পান সম্পত্তির সাড়ে পাঁচ আনা এবং অন্য তিন ছেলে পান সাড়ে তিন আনা ১৯৫০ [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা ছিল। প্রথা বিলুপ্ত হলে পুঠিয়া রাজবাড়ীর জমিদারিও বিলুপ্ত হয়। কিন্তু জমিদারি বিলুপ্ত হলেও সে আমলে নির্মিত তাঁদের প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা ঠিকই এখনো টিকে রয়েছে।
 অপরূপ এ প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে নির্মাণ করান।ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরন, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ছয়টি রাজদিঘী আছে।

 প্রত্যেকটা দিঘীর আয়তন ছয় একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি। সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। এ ছাড়া আছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। জোড়বাংলা মন্দির, বাংলো মন্দির, পঞ্চরত্ন অর্থাৎ চূড়াবিশিষ্ট মন্দির অর্থাৎ বাংলার বিভিন্ন গড়নরীতির মন্দিরগুলোর প্রতিটিই আকর্ষণীয়। এ ছাড়া রানির স্নানের ঘাট, অন্দর মহল মিলিয়ে বিশাল রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ।
রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কিঃমিঃ উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত। বাসে করে দেশের যে কোন স্থান হতে পুঠিয়া আসা যায় এবং ট্রেনে করে নাটোর অথবা রাজশাহী নেমেও সড়কপথে সহজে আসা যায়।

রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য


রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য যা সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত।
এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি।
এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল।

রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর।
বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম।

কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়।
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এনা পরিবহন ইত্যাদি বাস শ্রীমঙ্গল যায়।
ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’টাকা। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস।
সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস।
আর বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস।
ভাড়া ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস।
শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ে উদয়ন এক্সপ্রেস।
ভাড়া ১৪০ থেকে ৯৪৩ টাকা।শ্রীমঙ্গল থেকে কালেঙ্গার জিপ ভাড়া দুই থেকে তিন হাজার।

লক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহ মন্দির



ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। লক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহ মন্দিরটি তাঁর অমর কীর্তি।
ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ইছামতীর তীরে কলাকোপা-বান্দুরার অবস্থান। ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিশাল এক ভান্ডার কলাকোপা-বান্দুরা। উনিশ শতকেও এখানে জমিদারদের বসতি ছিল। প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ গ্রাম এই কলাকোপা-বান্দুরা। যা ছিল একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের তীর্থস্থান। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যও চোখ জুড়ানো। যার প্রাণ ইছামতী নদী।
এখানে দেখার আছে অনেক কিছু। কোকিলপেয়ারী জমিদারবাড়ি বা জমিদার ব্রজেন সাহার ব্রজ নিকেতন, যা এখন জজবাড়ি নামে খ্যাত; ব্যবসায়ী রাধানাথ সাহার বাড়ি, শ্রীযুক্ত বাবু লোকনাথ সাহার বাড়ি, যার খ্যাতি মঠবাড়ি বা তেলিবাড়ি নামে; মধু বাবুর পাইন্নাবাড়ি, পোদ্দারবাড়ি, কালীবাড়ি এবং কলাকোপার কাছে সামসাবাদ তাঁতপল্লি, এর একটু দূরে আলানপুর তাঁতপল্লি। এ ছাড়া আছে হলিক্রস স্কুল এবং জপমালা রানির গির্জা, এর বাইরেও অনেক পুরোনো ভবন ও মঠ চোখে পড়বে কলাকোপা-বান্দুরায়।

নবাবগঞ্জ চৌরাস্তায় মহাকবি কায়কোবাদ চত্বর থেকে একটি সড়ক সোজা কলাকোপা চলে গেছে। অন্য সড়কটি একটু বামে কলাকোপা হয়ে বান্দুরার পথ ধরেছে। বামের এই পথ ধরে একটু সামনে এগোলেই একটি ভাঙা মন্দিরের দেখা মিলবে। এর পেছনে কোকিলপেয়ারী জমিদারবাড়ি। সামনের ভাঙা মন্দিরের মতোই ভগ্ন দশা তার। কোনো রকমে দাঁড়িয়ে থেকে তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে চলেছে। তার পাশেই জমিদার ব্রজেন সাহার ব্রজ নিকেতন। আশির দশকের পর একটি বিচারক পরিবার এখানে বসবাস করতে শুরু করলে ব্রজ নিকেতন জজবাড়ি নাম গ্রহণ করে। জজবাড়ি এখন কলাকোপার প্রাণ। রাস্তার এক পাশে বাড়ি। অন্য পাশে দোকান, বাজার, চা—আড্ডা কত কী! তবে খুব একটা জমজমাট এখনো হয়ে ওঠেনি। জজবাড়িতে প্রচুর গাছগাছালির সমারোহ। গাছের ফাঁকে ঘুরে বেড়ায় চিত্রা হরিণ।
এ বাড়ির পাশের রাস্তাটি চলে গেছে আনসার ও ভিডিপির ক্যাম্পের দিকে। এখানে যে বাড়িতে ২৯ আনসার ব্যাটালিয়নের বসবাস, তা তেলিবাড়ি নামে খ্যাত। অনেকে একে বলে মঠবাড়ি। শোনা যায়, বাড়ির একদা মালিক বাবু লোকনাথ তেল বিক্রি করে ধনী হয়েছিলেন। তাই বাড়ির এমন নাম হয়েছে। এখানে তিন-চারটি বাড়ি আছে। ইছামতীর তীরে তেলিদের বিশাল দুটি মহল সত্যি অসাধারণ! তেলিবাড়ি থেকে সামনে ইছামতীর তীর ধরে একটু সামনে এগোলে যে ইমারতগুলো চোখে পড়বে, তার প্রথমটি পাইন্নাবাড়ি। এই বাড়ির তিন মালিকের অন্যতম মধু বাবু পান বিক্রি করে ধনী হওয়ার জন্যই বাড়িটির এমন নামকরণ।
কলাকোপা-বান্দুরায় ইছামতীর তীরে রোমান স্থাপত্যশৈলীর আরেক নিদর্শন রাধানাথ সাহার বাড়ি। বাড়িটির বয়স প্রায় ২০০ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বাড়িতে লুটপাট চলে, বাড়িটিও ভাঙচুর হয়। বাড়ির প্রধান ফটক ধরে ভেতরে ঢুকলে সামনে পড়বে বিশাল উঠোন। মাঝে জলাধার, আর তুলসী মঞ্চ। পাশেই পুজোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান। বাড়ির মালিক রাধানাথ সাহা চাল ও সুপারির ব্যবসা করতেন। ভারতের মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত তার ব্যবসার পরিধি ছিল।

এবার রাধানাথ সাহার বাড়ি পেছনে ফেলে একটু সামনে এগিয়ে যাই। সেখানেই চোখে পড়ে খেলারামের সেই বিখ্যাত বিগ্রহ মন্দিরটি। পাশেই বিশাল পুকুর। প্রচলিত আছে, মাকে বাঁচাতে খেলারাম দাতা এই পুকুরে নেমেছিলেন। আর উঠে আসেননি। এলাকাবাসীর এখনো বিশ্বাস, খেলারাম একদিন ঠিকই ফিরে আসবেন, সঙ্গে নিয়ে আসবেন গঙ্গা নদীকে।
এবার বান্দুরায়
ফুলতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু সামনে এগোলেই নবাবগঞ্জের বান্দুরা গ্রাম। প্রথমেই চোখে পড়বে হলিক্রস স্কুল। আরেকটু সামনে এগোলে বিশাল মাঠ পেরিয়ে পাওয়া গেল জপমালা রানির গির্জা। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত এই গির্জাটি গথিক শিল্পকর্মের অনন্য নিদর্শন। পুরো গির্জাটি হলুদ বর্ণের সুন্দর কারুকাজে ভরা। প্রার্থনা কক্ষ, সমাধিস্থলসহ সব দেখে মন ভরে যাবে। গির্জার সামনেই জপমালা দেবীর নামাঙ্কিত ফলক তাঁর স্মৃতি ধরে রেখেছে। ফেরার পথে সময় থাকলে তাঁতপল্লি ঘুরে আসতে পারেন। কলাকোপা-বান্দুরায় থাকার মতো ভালো হোটেল নেই। তাই সন্ধ্যার আগেই ঢাকার বাস ধরা ভালো। তবে বাড়ি ফেরার সময় বান্দুরার বাসুদেব সাহার মিষ্টান্ন ভান্ডার ঘুরে আসতে ভুল করবেন না।
কীভাবে যাবেন
কলাকোপা-বান্দুরায় দিনে এসে দিনেই ঢাকায় ফেরা যায়। এ জন্য সকালেই রওনা হওয়া দরকার। গুলিস্তান, বাবুবাজার, কেরানীগঞ্জ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে সরাসরি বান্দুরার বাস সার্ভিস আছে। তবে দলবেঁধে মাইক্রোবাস নিয়ে গেলে দারুণ একটা পিকনিক করা যাবে।
গুলিস্তান মাজারের ৫০ গজ দক্ষিন থেকে প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে আধ ঘন্টা পরপর এন মল্লিক বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৬৫ টাকা।দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারেন।

বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আমের জেলা নামে বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আম বিখ্যাত এই জেলায় আছে অনেক নিদর্শন। দেশের বিভিন্ন জেলায় আছে অনেক মসজিদ কিন্তু প্রাচীন এই মসজিদটি অনেক ঐতিহ্য বহন করে আসছে আমাদের দেশে। ১০ টাকার পুরনো নোটে এই সোনামসজিদের ছবি আছে।
বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দেখার মতোই একটি দর্শনীয় স্থান। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তরেখা বরাবর আবস্থিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোর মধ্যে এই সোনামসজিদ অন্যতম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শত শত বছরের পুরনো এই সোনামসজিদসহ অন্য মসজিদগুলোর অপূর্ব কারুকাজ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন নিঃসন্দেহে। আর আপনি আপনার অবসর ছুটির সময় অথবা গ্রীষ্মকালীন ছুটির এই সময়টা অনেক ভালোভাবে কাটাতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণ করে এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী সোনামসজিদ দেখে।
ছোট সোনামসজিদ
কারুকার্যময় স্থাপত্য নির্মাণে মুঘলদের অবদান অনস্বীকার্য। মুঘলদের কল্যাণে আমাদের দেশেও নির্মিত হয়েছে প্রাচীন অথচ সমৃদ্ধ কিছু স্থাপত্য শিল্প। বাংলার মুসলিম স্থাপত্য অনুশীলন যুগে যে কয়েকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছোট সোনামসজিদের নাম অবশ্যই আসবে। কথিত আছে যে, একবার স্যার লর্ড ক্যানিংহাম এসেছিলেন এ মসজিদটি দেখতে। অসাধারণ সৌন্দর্য রঙের ১৫টি গম্বুজের এ মসজিদটি দেখে তিনিই এর নামকরণ করেন সোনামসজিদ। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একেবারে সীমানার কাছাকাছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রকারান্তরে গৌড় অঞ্চলে অবস্থিত এই সোনামসজিদ। জায়গাটা কোথায় আন্দাজ করতে পারছেন তো?
‘কানসাট’ স্থানটির নাম শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। সেই কানসাট থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনামসজিদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ এলাকাটি বাংলাদেশের একটি খ্যাতনামা স্থলবন্দরও। সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫৯১ খ্রি.) ওয়ালী মুহাম্মদ এ মসজিদটি তৈরি করেন বলে জানা যায়।

মসজিদের আকার
আকারের দিক থেকে দেখতে গেলে দেখা যাবে এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৫ মি. (৮২ ফুট) ও প্রস্থ ১৬.৯০ মি. (৫২ ফুট)। মসজিদের চার কোনায় ৪টি তুঘলক পদ্ধতির বুরুজ বা টাওয়ার শোভা পাচ্ছে। পূর্ব দিকে বা সমমানের দেয়ালে রয়েছে পাঁচটি খিলানায়িত দরজা। মসজিদের মূল প্রবেশপথটি পাশের দরজাগুলো থেকে বড়। সে আমলে যে কোন মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে দামেস্কের আদি মসজিদের নকশা পরিকল্পনা অনুসরণ করার নীতি থাকলেও সোনামসজিদ নির্মিত হয়েছিল বাংলার জলবায়ুতে টিকে থাকার উপযোগী করে। মসজিদটির সামনের দেয়ালে ঐশ্বর্যশালী কারুকার্যে খচিত থাকলেও সময়ের স্রোতে তা কিছুটা বিলীনপ্রায়। প্রায় পুরো নকশা কারুকার্য পাথরের ওপর খোদাই করে দেয়ালের গায়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে যুগে যতগুলো ইমারত প্রস্তর খোদাই নকশা কারুকার্য ধারণ করে আছে তার মধ্যে সোনামসজিদের প্রস্তর খোদাই নকশালঙ্কার সর্বোৎকৃষ্ট। কিন্তু এই ঐতিহাসিক মসজিদটি আজ অযতœ অবহেলার নির্মম সাক্ষী। সময় তার নিষ্ঠুর হাতে মসজিদের অপূর্ব কারুকার্যের সৌন্দর্যকে নিংড়ে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। এরপরও সেই কোনও মুঘলদের গড়ে যাওয়া এ অপূর্ব সুন্দর মসজিদটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় এখনও।
তাহাখানা কমপ্লেক্স
ছোট সোনামসজিদ দেখে ফেরার কথা ভাববেন না যেন! কারণ গৌড়জুড়েই শত শত বছরের স্থাপত্যকলার চিহ্ন রয়েছে। ছোট সোনামসজিদ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই রয়েছে তাহাখানা কমপ্লেক্স। সুবাদার শাহা সুজার শাসনামলে (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রি.) নির্মিত এ স্থাপত্য দেখে মনে হতে পারে মুঘল সম্রাজ্যে ফিরে এলাম বুঝি। সোনামসজিদের পাশে বিশাল একটা দীঘির পশ্চিম পাড়জুড়ে তাহাখানা কমপ্লেক্স অবস্থিত। এখানে একই সঙ্গে রয়েছে একটি মসজিদ, প্রাসাদ ও শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীল সমাধি। আয়তাকার আকৃতির একটি দুইতলা বিশিষ্ট ইমারত-প্রাসাদ মুঘলদের স্থাপত্যকলার সব রকম নিদর্শন রয়েছে এই প্রাসাদে।

তাহাখানার মূল প্রাসাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সামান্য দূরে রয়েছে শাহ্ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের এক মাইল বিশিষ্ট একটি মসজিদ ঘর আছে। পদ্মফুলের মতো প্রস্ফুটিত হয়ে আছে গম্বুজের চূড়া। আর কলসাকৃতির শিয়োচূড়া ঘিরে রেখেছে একে। হাঁটতে হাঁটতে মনে হতে পারে ৪০০ বছর আগের সময়ে ফিরে গেছি হয়তো। চার দিকে অদ্ভুত শান্ত পরিবেশ তাহাখানা থেকে ৩০-৩৫ মি. উত্তরে রয়েছে শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর সমাধি। বর্গাকার নকশা পরিকল্পনায় নির্মিত এবং অভ্যন্তরীণ সমাধি কক্ষের চতুর্দিকে প্রশস্ত বারান্দা আছে। পূর্ব-পশ্চিম এবং দক্ষিণে ৩টি করে খিলানযুক্ত মোট ১২টি খিলানপথ দেখেই ক্যানিংহাম-এর নামকরণ করেছিলেন বারদুয়ারী।
চামকাঠি মসজিদ বা চকের মসজিদ
তাহাখানা কমপ্লেক্সের প্রধান সড়ক ধরে আরও কিছু দূর এগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রাচীর বাঁয়ে রেখে ডান দিকে রাস্তা ধরে বিশাল আমবাগানের শেষ সীমায় বিশাল এক দীঘির পাড়জুড়ে রয়েছে গৌড় সভ্যতার আরও এক নিদর্শন প্রচীর এক মসজিদ। ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটিকে স্থানীয় বাসিন্দারা চেনেন চকের মসজিদ হিসেবে। গৌড় সভ্যতার লগ্নে স্থাপিত এ মসজিদের অসাধারণ কারুকাজের অল্প কিছু অবশিষ্ট রয়েছে এখনও। কে জানে কত শতাব্দী ধরে কত যুগের সাক্ষী এ মসজিদটির সঙ্গে নির্মাণশৈলীতে অনেক মিল রয়েছে।
তাহাখানা থেকে চকের মসজিদে রিকশায় যেতে ভাড়া নেবে খুব বেশি হলে ১০-১৫ টাকা। তবে আরও সহজ হল ছোট সোনামসজিদ থেকেই ঘণ্টা হিসেবে রিকশা নিয়ে নেয়া হয় তাহলে একবারে ৩টা মসজিদ দেখা হয়ে যাবে। আর গাড়ি নিয়ে গেলে তো কথাই নেই।

ভারত-বাংলাদেশে সীমানা
সোনামসজিদ থেকে ফেরার সময় আপনি আপনার যাত্রা কিছু বিরতি দিয়ে রাস্তার পাশে পারেন দেখেতে পাবে বাংলাদেশ-ভারত সীমানা। নিজের চোখে আপনি দেখতে পারেন পাশের প্রতিবেশী ভারতের কিছু অংশ। বিএসএফ আর বিডিআর সবসময় প্রস্তুত সীমান্ত রক্ষার্থে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার চেয়ে রাজশাহী হয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ছাড়া থাকা-খাওয়ার জন্য ভালো জায়গা ওই এলাকায় পাওয়া দুষ্কর। তাই সোনামসজিদ যেতে রাজশাহী থেকে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া বর্ডারগামী বাসে ৮০ বা ৯০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে উঠে বসবেন। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় আপনি পৌঁছে যাবেন সোনামসজিদ এলাকায়।
প্রথমে ছোট সোনামসজিদ এ কিছুদূর গেলে বড় সোনামসজিদ চকের মসজিদ, তাহাখানা কমপ্লেক্স দেখতে পাবেন। আর যেতে যেতে পথের দু’পাশে দেখবেন বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সারি সারি আমবাগান। আমের সিজনে আমবাগানের গাছগুলোতে অনেক আমও পাবেন।

গারোগ্রাম আচ্কীপাড়া হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ


হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ১ নম্বর ভুবনকুড়া ইউনিয়নের এক সবুজ ছায়াঘেরা গ্রাম আচ্কীপাড়া।
বিখ্যাত খাবারের নামমুক্তাগাছার মণ্ডা, ময়মনসিংহের আমিরতি,দয়াময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের খেজুর গুরের সন্দেশ ( ময়মনসিংহ ),জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ছানার পোলাও ( ময়মনসিংহ )

কীভাবে যাবেন : মহাখালী থেকে এনা পরিহনের বাস হালুয়াঘাটের শ্যামলী বাংলা, ইসলাম-সহ অনেক ডাইরেক্ট বাস আছে মহাখালী হতে ২০ মিনিট পরপর ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ঢাকা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার ময়মনসিংহ। ঢাকা থেকে সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ হয়ে বাস যাতায়াত করে। ইচ্ছা করলে সেই বাসে চড়ে যাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়ের কুল ঘেঁষে সীমান্তবর্তী উপজেলার নাম হালুয়াঘাট। হালুয়াঘাট এ বাংলাদেশের আদি উপজাতি গারোদের বসবাস। গারো ছাড়াও এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ডালু সম্প্রদায় বসবাস করে। হালুয়াঘাট এ দুইটি স্থল বন্দর বিদ্যমান। যার মাধ্যমে সরাসরি ভারত থেকে কয়লা আমদানি করা হয়। সারা বাংলাদেশে কয়লা সরবরাহ করা হয়।

হালুয়াঘাট উপজেলায় তিনটি নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে ভোগাই নদী, কংস নদী এবং মালিজি নদী

ছাগলকান্দা ঝর্ণ


ছাগলকান্দা ঝর্ণার ট্রেইল মোটামুটি অপরিচিত একটা ট্রেইল।
অসাধারন এই ট্রেইলে বড় কমলদহ ঝর্ণা আছে। বড় কমলদহ ঝর্ণার Upstream এ আবার আছে ৪-৫ টা বড় এবং মাঝারি ঝর্না।
এদের মধ্যে অন্যতম হল ছাগলকান্দা ঝর্ণা।বড় দারোগার হাট থেকে মহা সড়ক ধরে উত্তর দিকে ( ঢাকার দিকে) আসলে প্রথমে একটি ইট খোলা পরবে।
ইট খোলা পার হয়ে হাতের ডানের প্রথম মাটির রাস্তা ধরে যেতে হবে ।
রাস্তা ধরে কিছু দূর গিয়ে ঝিরিতে নেমে ঝিরি ধরে ২০ মিনিটের মত গেলে ঝিরি মুখে পড়বে কমলদহ ঝর্ণা।
মূলত এটি একটি ক্যাসকেড। ছাগলকান্দা ঝর্ণার আরেক নাম কমলক ঝর্ণা।
৩ ধাপের এ ঝর্ণা নিচ থেকে মাত্র ১ ধাপ দেখা যায়।
বাকি ২ ধাপ দেখতে হলে আপনাকে ঝর্ণা বেয়ে উপরে উঠতে হবে।
উপরে উঠার অনেক সাবধানতা অবলম্বল করতে হবে।
অনেক পিচ্ছিল, একটু অসর্তক হলে, পড়ে হাত – পা ভাঙ্গার সাথে মৃত্যুর ভয় ও থাকে।
এ ঝর্ণার নিচে গোসল শেষে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে উপরে উঠে হাঁটতে থাকবেন।
হাঁটতে হাঁটতে প্রায় ৩০ মিনিট পর দেখবেন সামনের পথটি ইংরেজী Y আকার ধারণ করেছে।
আপনি হাতের বামদিকে হাঁটবেন। সামনে আবার দেখবেন পথটি Y আকার ধারণ করেছে।
আবার ও হাতের বামে হাঁটবেন। এভাবে, একসময় পেয়ে যাবেন ২য় ঝর্ণাটি। যার নাম ছাগলকান্দা। এখানে, পানিতে নামার আগে বাঁশ কিংবা লাঠি দিয়ে দেখে নিবেন গভীরতা কতটুকু।

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে গেলে চট্টগ্রামগামী যে কোন বাসে (ভাড়া মানভেদে ৪০০-১২০০টাকা) সীতাকুণ্ড এর বড় দারোগারহাট বাজারে নামতে হবে।
এছাড়া ট্রেনে ফেনী বা চট্রগ্রাম নেমে আসতে পারবেন
চট্রগ্রামের শুভপুর বা অলংকার থেকে বাসে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই যেতে পারবেন।
চট্টগ্রাম (কদমতলী শুভপুর ষ্টেশন) থেকে চয়েসে যেতে পারেন, ভাড়া ৮০ টাকা অন্য উপায়েও যাওয়া যায় মিনিবাসে করে।
বড় দারোগার হাট থেকে লেগুনাতে ইট ভাটার পর্যন্ত।
এর পরের রাস্তা দিয়ে পূর্ব দিকে ২০-২৫ মিনিটের হাটা পথ।
প্রথমেই দেখা মিলবে কমলদহ ঝর্ণার। বাকি পথ ছড়া ধরে গেলেই দেখা মিলবে ছাগলকান্দা ঝর্ণার।

১ দিনের ট্যুরে চন্দ্রনাথ পাহাড়, গুলিয়াখালি সি-বিচ এবং মহামায়া লেকে কায়কিং অভিযান। খরচ ১০০০/১২০০ টাকা।




যেভাবে যাবেন:
কমলাপুর থেকে রাত ১০.৩০ এর চট্রগ্রাম মেইল ট্রেনে করে রওনা দিয়ে সকাল বেলা সীতাকুন্ড ষ্টেশন এ নেমে পড়বেন টিকেট ১১০ টাকা লোকাল।
স্টেশন থেকে একটু সামনে আসলে সি এন জি পাওয়া যায় চন্দ্রনাথ পাহাড় যাওয়ার জন্য জন প্রতি ২০ টাকা ভাড়া। (পাহাড়ের উঠার আগে অবশ্যই সবাই আলাদা ভাবে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি এবং শুকনা খাবার নিয়ে উঠবেন খেজুর হলে ভালো হবে। চন্দ্রনাথ পাহাড় জয় করে ১২.৩০ টার দিকে ব্যাক করুন সীতাকুন্ড বাস স্ট্যান্ড।
তারপর বাস স্ট্যান্ড সিএনজি করে চলে যাবেন গুলিয়াখালির উদ্দেশ্যে ভাড়া ২০ টাকা। গুলিয়াখালি নেমে ট্রলার দিয়ে সমুদ্র ঘুরে দেখতে পারেন পার পারসোন ৩৫ টাকায় ঠিক করেছি কিন্তু দাম চাইবে ৫০/৭০ টাকা। গুলিয়াখালি উপভোগ করা শেসে। 

আবার বাস স্ট্যান্ড ব্যাক করুন এবং দুপুরে একটা জম্পেশ খাবার খেয়ে সীতাকুন্ড বাস স্ট্যান্ড থেকে লেগুনা/বাস/মিনি বাসে করে মিরসরাই মহামায়া বাজারে চলে আসবেন ৩০/৩৫ টাকা ভাড়া দামদর করে উঠবেন।
মহামায়া বাজার থেকে রাস্তার বিপরীত পাড়ে গিয়ে সিএনজি তে উঠবেন মহামায়া লেক যাওয়ার জন্য ভাড়া ১৫ টাকা। এবং নামার পর লেক প্রবেশ ফি ১০ টাকা। চেস্টা করবেন ৩.৩০/৪.০০ টার ভেতরে লেকে থাকার তা নাহলে কায়কিং এ সিরিয়ালে থাকতে হবে। কায়কিং প্রতি বোট ৩০০ টাকা ২ জন বসা যায়। তবে স্টুডেন্টদের আইডি কার্ড শো করলে পার বোড ২০০ টাকা। সন্ধার মধ্যে কায়কিং শেস করে মহামায়া বাজার এসে সিএনজি তে উঠবেন মিঠাছড়া বাজার যাওয়ার জন্য ভাড়া ১০ টাকা সেখান থেকে বাসের টিকট রাতের খাবার শেস করে রাত ১০/১১ টার বাসে করে ঢাকায় ব্যাক করবেন পরের দিন সকালে ইনশাআল্লাহ ঢাক।




নোট : যেখানেই ঘুরতে যাই না কেন অপচনসীল দ্রব্য যেমন: পলিথিন,প্লাস্টিকের বোতল,খাবার প্যাকেট,সিগারেটের প্যাকেট ইত্যাদি পানিতে না ফেলে যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিস্ট স্থানে ফেলি। একজন ট্রাভেলার হিসেবে প্রকৃতিকে রক্ষা করি।

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক, সীতাকুণ্ড






চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলের সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে সহস্রধারা নামের এই ঝর্ণাটি অবস্থিত। ইকোপার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত।

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্কবাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে ১৯৯৮ সালে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮০৮.০০ হেক্টর জমি নিয়ে এই বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যটি গঠিত। ১৯৯৬ একরের পার্কটি দুই অংশে বিভক্ত। ১,০০০ একর জায়গায় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ৯৯৬ একরজায়গা জুড়ে ইকোপার্ক এলাকা। জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা পার্কটিতে রয়েছে বিরল প্রজাতির গাছপালা, হাজারো রকমের নজকাড়া ফুলের গাছ, কৃত্রিম লেক ও নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্র্রধারা ঝর্নাসহ ঝিরিপথের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ঝর্না, পিকনিক স্পট, বিশ্রামের ছাউনি।

এ পার্কটির মূল আকর্ষণ চন্দ্রনাথ মন্দির। টিকেট কাউন্টার থেকে মন্দির পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের পথ পায়ে হেঁটে অথবা গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়। মন্দিরের নিচে থেকে পাহাড়ি পথে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠলে দেখা মিলবে মন্দিরের। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজায় মগ্ন থাকেন এখানে। ফাল্গুনে শিবসংক্রান্তি পূজার সময় দেশ বিদেশের বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের কীর্তনে মুখর হয়ে ওঠে পুরো চন্দ্রনাথ ।

ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদেশের প্রথম এবং এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম এ ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনটির অবস্থান।


মূল ফটক পেরিয়ে একটু এগোলেই রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভ। কবি এসেছিলেন পাহাড়ের এ জনপদে। এরই বিস্তারিত লেখা আছে স্তম্ভটির পাশে সাঁটানো সাইনবোর্ডে। এর কিছুদূর এগোলে ম্যাপে পার্কটির দর্শনীয় স্থান নির্দেশিত রয়েছে।
সেখানে নির্দেশিত পথ ধরে দেড় কিলোমিটার এগোলে সুপ্তধারা ঝর্নার সাইন বোর্ড ‘সুপ্তধারা ঘুমিয়ে পড়ি জেগে উঠি বরষায়’। এরপর প্রায় এক কিলোমিটার পাহাড়ি ট্রেইল পেরিয়ে দেখা পাবেন অনিন্দ্যসুন্দর ঝর্না ‘সুপ্তধারা’র। আবার এক কিলোমিটার পর্যন্ত গেলে চোখে পড়বে সহস্র্রধারা ঝর্নার সাইন বোর্ড। এই এক কিলোমিটার পথে রয়েছে পিকনিক স্পট, ওয়াচ টাওয়ার, হিম চত্বর। সেখানে সেট করা চেয়ারে বসে দূর সমুদ্রের রূপ চোখে পড়বে। সহস্র্রধারা ঝর্ণা দেখে এসে বোটানিকাল গার্ডেনের উত্তরে গেলে চোখে পড়বে পাহাড় আর পাহাড়। সহস্র্র ধারা ও সুপ্তধারা ঝর্না থেকে বহমান জলকে কৃত্রিম বাঁধ তৈরির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম লেক।




সিএনজি অটোরিকশায় চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে আসতে প্রায় ২৭০/- টাকা ভাড়া দিতে হবে। ইকো পার্ক থেকে ফেরার সময় সীতাকুণ্ড বাজারে আপনি প্রচুর সিএনজি অটোরিকশা পাবেন।

ঢাকার সাথে চট্রগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। বাসে করে সরাসরি ঢাকা থেকে চট্রগ্রামে যেতে পারবেন। আপনার সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্রগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী কয়েকটি বাস সার্ভিস সম্পর্কে নিম্নে তথ্য প্রদান করা হলঃ
১। সাউদিয়া পরিবহন
আরামবাগ কাউন্টার, ফোনঃ +৮৮-০২-৭১০২৪৬৫
গাবতলি কাউণ্টার, ফোনঃ +৮৮-০২-৮০১৮৪৪৫
কলাবাগান কাউণ্টার, ফোনঃ +৮৮-০২-৯১২৪৭৯২
২। এস আলম
ফোনঃ +৮৮-০৩১-৬৩৬৯৯৭, ৬১১৪২৬
৩। হানিফ এন্টারপ্রাইজ
পান্থপথ কাউণ্টার, ফোনঃ ০১৭৩৪০২৬৭০
আরামবাগ কাউণ্টার, ফোনঃ ০১৭১৩৪০২৬৭১
সায়েদাবাদ কাউণ্টার, ফোনঃ ০১৭১৩৪০২৬৭৩
৪। গ্রিনলাইন পরিবহন
আরামবাগ কাউণ্টার, ফোনঃ ০২-৭১৯২৩০০
ফকিরাপুল কাউণ্টার, ফোনঃ ০২-৭১৯১৯০০
চট্রগ্রামে থাকার জন্য বেশকিছু বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। আপনার সুবিধার্থে এসব হোটেল সম্পর্কে কিছু তথ্য নিম্নে প্রদান করা হলঃ
১। হোটেল গোল্ডেন ইন
ঠিকানাঃ ৩৩৬, স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম
ফোনঃ ০৩১-৬১১০০৪
২। এশিয়ান এসআর হোটেল
ঠিকানাঃ ২৯১, স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম
ফোনঃ ০৩১-২৮৫০৩৪৬-৮
৩। হোটেল পার্ক
ঠিকানাঃ ৬২৭, ডিটি রোড, কদমতলি, চট্রগ্রাম
ফোনঃ ০১৮১৯৩৮৮০১১
৪। হোটেল ল্যান্ডমার্ক
ঠিকানাঃ ৩৭২, শেখ মুজিব সড়ক, আগ্রাবাদ, চট্রগ্রাম
ফোনঃ ০৩১-৮১৩৫৯৮/৭২৭২৯৯

মধুটিলা ইকো পার্ক



ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষা শেরপুর জেলার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়। এই গারো পাহাড়ে দেশের পার্বত্য এলাকার মতো সুউচ্চ পর্বত বা পাহাড় ও লেক না থাকলেও এখানকার শাল-গজারি, ইউকিলিপটাস-একাশিয়া, সেগুন-মেহগিনি, মিনঝিরিসহ নানা প্রজাতির গাছগালি ঘেরা ঊঁচু নিচু টিলা আর পাহাড়ি টিলা বেয়ে সমতলের দিকে ছুটে চলা ছোট ছোট ঝর্ণা, ঝোড়া ও ছড়া দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ যে কোন প্রকৃতি প্রেমির হৃদয়কে আন্দোলিত করবে। ওই সব পাহাড়ি টিলার উপর এবং সমতলে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী নৃ-গোষ্ঠির নানা সম্প্রদায়দের লোকদের সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে।



পাহাড়ের চূড়ায় ওয়াচ টাওয়ারে দাড়িয়ে উচু-নিচু পাহাড়ের গায়- মেঘ-রোদ্দুরের খেলা আর সীমান্তের ওপারের ভারতীয় অধিবাসিদের ঘর-বাড়ি’র দৃশ্য মন ছুয়ে যায়, হৃদয়কে উদ্বেলিত করে।সেসঙ্গে এই গারো পহাড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা হাজার হাজার নর-নারী ও প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন মেলা ও হাট বসে।


১৯৯৯ সনে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনাধীন পোড়াগাঁও ইউনিয়নের মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমেশ্চূড়া বীটের আওতায় ৩৮০ একর পাহাড়ি টিলার উপর “মধুটিলা ইকো পার্ক” নামে মনোরম পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছে। গারো পাহাড় এলাকায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক ওই পিকনিক কেন্দ্রে এখন হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারনায় ভরে উঠেছে। প্রতি বছর শীত মওসুমে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনে বাস, মাক্রোবাস, প্রাইভেট কার করে হাজার হাজার ভ্রমন পিপাসুরা বেড়াতে আসছে। ফলে জেলা প্রশাসন ও সরকারের রাজস্ব খাতে প্রতি বছর আয় হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ময়মনসিংহ বন বিভাগ ১৯৯৯ সন থেকে ইকো পার্কের প্রাথমিক অবকাঠামো ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ দুই পর্যায়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শেষ করে ২০০৬-০৭ অর্থ বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইকো পার্কের যাত্রা শুরু হয়। ওই বছরই ইকো পার্কের বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয় ৫২ হাজার ৮৩১ টাকা। এরপর ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ১৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬৫৮ টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে আয় হয় ২৮ লক্ষ ৩৯ হাজার ৩০৬ টাকা এবং ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা এবং চলতি বছরে আরো আয় বৃদ্ধি হবে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এই ইকো পার্কে বর্তমানে সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপ্লে¬¬ মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ী পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও বোটিং, স্টার ব্রীজ, স্ট্রেম্পিং রোড বা সুউচ্চ পাহাড়ে উঠার জন্য ধাপ রাস্তা (সিঁড়ি), মিনি শিশু পার্ক, মহুয়া রেষ্ট হাউজ, স্টীলের ছাতা, ইকো ফ্রেন্ডলি বেঞ্চ, আধুনিক পাবলিক টয়লেট, পার্কের প্রবেশ পথ ধরে যাওয়া বিভিন্ন সড়কের পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছে হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জীব জন্তুর ভাষ্কর্য। এছাড়া আরো রয়েছে বিরল প্রজাতি, পশু পাখি আকৃষ্ট, ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির গাছের বাগান, মৌসুমী ফুলের বাগান এবং সাত রঙের গোলাপ বাগান। 


পার্কের উচু টিলার উপর ৩ কামরা বিশিষ্ট সুদৃশ্য বাংলো বা ‘মহুয়া রেস্ট হাউজ’ ব্যাবহার করতে হলে ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিস থেকে প্রতিদিনের জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২০০ টাকা ভ্যাটসহ মোট ৪৭০০ টাকায় ভাড়া নিতে হবে।
যেভাবে যাবেন :
ঢাকা মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে শেরপুর জেলা সদরে বেশ কিছু ভাল বাস সার্ভিস রয়েছে। জন প্রতি ভাড়া হচ্ছে 290 টাকা। এরপর শেরপুর জেলা সদরের লোকাল বাস স্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ি উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাসে জন প্রতি ২০ টাকায় যাওয়া যাবে। এরপর মধুটিলা ইকো পার্ক পর্যন্ত রিক্সা বা ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় যাওয়া যাবে। এতে জন প্রতি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং রিজার্ভ ভাড়া নিবে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এছাড়া শেরপুর জেলা শহর থেকে ভাড়ায় চালিত সিএনজি অটোরিক্সা অথবা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও ইকো পার্কে যাওয়া যাবে। দিন চুক্তি ভাড়া নিবে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মধুটিলা ইকো পার্ক থেকে ভোর ৬ টায় প্রতিদিন ঢাকার মিরপুর পর্যন্ত এবং মিরপুর থেকে প্রতিদিন বেলা ২ টায় ইকো পার্ক পর্যন্ত যাতায়াত করছে। আর যারা ঢাকা থেকে নিজস্ব গাড়ীতে আসতে চান তারা ময়মনসিংহ পার হয়ে সরাসরি শেরপুরের নকলা উপজেলা থেকে শেরপুর জেলা সদরে না এসে নালিতাবাড়ি উপজেলা হয়ে মধুটিলা যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন :
কেউ যদি বেড়াতে এসে রাত্রি যাবন করতে চান তবে শেরপুর জেলা সদরেই থাকতে হবে। কারন নালিতাবাড়ি বা ইকো পার্কে রাত্রি যাপন করার মতো কোন আবাসিক হোটেল নেই। শেরপুর জেলা শহরে হাতে গোনা তিনটি ভাল মানের আবাসিক হোটেল ছাড়াও ভিআইপিদের জন্য জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ও এলজিইডি’র রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেগুলোতে রাত্রি যাপন বা রেস্ট নিতে গেলে সংশ্লিষ্ট অফিসে অগ্রিম বুকিং দিতে হবে। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজের প্রতিকক্ষ এক রাতের জন্য ভাড়া ৫০ টাকা, এলজিইডি’র প্রতিকক্ষ ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং সার্কিট হাউজের প্রতিকক্ষ ৪০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। তবে ওই রেস্ট হাউজে সরকারী কর্মকর্তাদের নাম মাত্র ২০ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে রাত্রী যাপন করতে পারবেন। এছাড়া শহরের আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে হচ্ছে হোটল সম্পদ, হোটেল বাগান বাড়ি ও কাকলি গেস্ট হাউজ অন্যতম। এসব হোটেলের রুম ভাড়া ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এসি রুমের ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
কোথায় খাবেন :
সীমান্ত এলাকায় ভাল মানের কোন খাবার হোটেল নেই। তবে শেরপুর জেলা শহরে ভাল মানের খাবার হোটেল রয়েছে হাতে গোনা ২ থেকে ৩ টি। জেলার বাইরে থেকে এই সীমান্ত এলাকার গারো পাহাড়ে বেড়াতে এসে রান্না-বান্নার ব্যাবস্থা না করতে পারলে শহরের ওইসব খাবার হোটেল থেকে খাবারের জন্য অগ্রিম বুকিং দিলে প্যাকেট সরবরাহ করা হয়।

মহেড়া জমিদার বাড়ি



ঢাকার আশেপাশে একদিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদার বাড়ি থেকে। জমিদার বাড়ির অপূর্ব কারুকাজ ও নির্মাণশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিত।




আমাদের ঐতিহ্যের অনেক কিছুই আমরা ধ্বংস করেছি,
সামান্য যে কয়েকটা অবশিষ্ট আছে সেগুলোরও নেই তেমন কোন প্রচার। মহেড়া জমিদার বাড়ীর কথা আমার ধারনা অনেকেই জানেন না।
অথচ ঢাকার খুব কাছে সুন্দর একটা স্থাপনা।
জায়গাটা বেড়ানোর জন্য বা পিকনিকের জন্য একটা আদর্শ স্থান।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মহেড়া জমিদার বাড়ি।


বিশাল এলাকা জুড়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত। হঠাৎ দেখলে মনে হবে সবুজ ঘাসের চাদরে যেন ফুটে আছে বিশাল শ্বেতপদ্ম! একটি নয়, পাশাপাশি কয়েকটি ভবন দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে প্রতিটি প্রাসাদজুড়েই। জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে পুকুর। চাইলে পুকুরে ঘুরতে পারবেন নৌকায়। রয়েছে বিশাল বাগান। বাগানে আনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছে তিতির পাখি।  


১৮৯০ সালে তৎকালীন জমিদারগণ চার ভাই মিলে জমিদারি পত্তন করেন। তাদের নাম বুদাই সাহা, বুদ্ধু সাহা, হরেন্দ্র সাহা এবং কালীচরণ সাহা। তারা সাহা পদবী ধারণ করেই শুরু করেন জমিদারি। তবে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সবাই রায় চৌধুরী পদবী গ্রহণ করেন। জমিদার বাড়ি নির্মাণ হয় চার অংশে।




মহেড়া জমিদার বাড়িটি মূলত চারটি ভবনে বেষ্টিত। মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ। বাড়িটির মোট ৮ একর জমির উপর অবস্থিত। এখানে বাসভবন, কাছারি ভবন, পুকুর এবং মাঠ রয়েছে।
১৯৭২ সালে মহেড়া জমিদার বাড়িটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জোনাল পুলিশ তট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে এটিকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। 
যেভাবে যাবেন

ঢাকার মহাখালী থেকে সরাসরি টাঙ্গাইলের বাস রয়েছে। মহেড়া জমিদার বাড়ি যাবেন বললেই নামিয়ে দেবে। জামুর্কী বাস স্ট্যান্ডে নেমে সিএনজিতে যেতে পারবেন মহেড়া জমিদার বাড়ি। ঢুকতে হলে টিকেট করতে হবে জনপ্রতি ৫০ টাকা।  

Travel

ঘুরে আসুন হামহাম জলপ্রপাত

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভুমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নতুন সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাত একনজর দেখার জন্য দেশের বিভ...